রাজস্থলী কাপ্তাই খালের ভাঙ্গনের হুমকির মুখে সদর বাজারসহ শতশত পরিবার

রাঙ্গামাটি

 

॥ রাজস্থলী প্রতিনিধি ॥

রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার কাপ্তাই খালের নদীর ভাঙ্গনে হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী রাজস্থলীর সদর বাজারসহ শতশত পরিবার।

উপজেলা সদর থেকে চার দিকে একশ গজের মধ্যে এবং ঘিলাছড়ি ও গাইন্দ্যা ইউনিয়নের সদর এলাকার দুই পাশের বসবাসরত শতশত পরিবার উপরের দিক থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক  ভাঙ্গনে  প্রায় ৫০ টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদীর স্রোতের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় অধিকাংশ বসতভিটার পাশাপাশি রাজস্থলী বাজার সেট ঘর, পাকা সিঁড়ি সহ বেশ কয়েকটি আধা পাকা বাড়িসহ অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলী জমি, রাস্তা-ঘাট, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শশ্মান, বাজারে যাতায়াতের ষ্টিলের ব্রীজ, উপজেলা খাদ্য গুদাম,বীর মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, তাইতং পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একমাত্র মাঠসহ শতশত বাসতঘর। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ধান-চাল নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেয়ার পাশাপাশি গাছপালা কেটে সড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজন রাস্তা ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বর্ষা মৌসুমে খাদ্য সহায়তা ও কয়েকটি পরিবারকে ডেউটিন প্রদান করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। স্থানীয়রা জানান ভাঙ্গন রোধে  পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে দীর্ঘ বছর আগে শুধু মাত্র তাইতং পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ রক্ষার্থে কিছু  ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ব্লগ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন বসতি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে এখনো ভাঙ্গন রোধে কোন প্রকার ব্যাবস্থা গ্রহন করা না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই ৫-১০ ফুট  করে করে জায়গা ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

রাজস্থলী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ আহমদ বলেন বাজাবে পশ্চিম সাইড দিয়ে যে হারে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে আগামী দশ বছরে উপজেলার সদর বাজার টি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজস্থলী বাজার চৌধুরী প্রজ্ঞাজ্যোতি চাকমা বলেন নদীর পাশের বসবাস রত পরিবার গুলো এবং বাজারে একটি সাইডে বেশ কয়েকটি দোকান প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলেই আতংকে দিন যাপন করছে। ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আবেদন করেও কোন সুফল পাননি বলে জানান। তাই ভাঙ্গন রক্ষার্থে দ্রুত ব্লগ স্থাপন দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন রাজস্থলী বাজার টি প্রতি বছর এভাবে মাটি ভাঙ্গতে থাকলে আগামী দশ বছরে বাজারটি জায়গা সংকটের হুমকির মুখে পড়বে। রাজস্থলী  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবাচ মারমা বলেন রাজস্থলী কাপ্তাই খালের উপর থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে প্রতি বছরেই ৪-৫ ফুট করে মাটি ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি বসত ভিটা ও বাজারের নদীতে নামার সিঁড়ি তলিয়ে গেছে।

কয়েকটি পরিবারকে  উপজেলা পরিষদের থেকে সল্প পরিসরে খাদ্য সহায়তা আর কয়েক বান্ডিল ডেউ টিন বিতরণ করা হয়েছে। তবে রাজস্থলী উপজেলা গাইন্দ্যা ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মাঝ খানের উপজেলা সদর বাজারটি একটি অংশে মাছ বাজার ও লোহা শিল্প  কর্মকারের দোকানসহ অর্ধশতাধিক দোকান পাট রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ব্লগ স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করেন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাপ্তাই শাখার সাব ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার জীয়া উদ্দিন আরিফের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন রাজস্থলী উপজেলার কাপ্তাই খালের ভাঙ্গনের বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের  মাধ্যমে শুনেছি । তবে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বরাদ্দ হাতে পেলেই ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া হলে অচিরেই খালের পাশে বসবাসরত বেশ কয়েকটি পরিবারসহ বাজারের একটি অংশ নদীর গর্তে বিলীন হয়ে যাবে বলে ধারণা করছে বাজারে ব্যাবসাহী ও পাশে বসবাসরত পরিবার গুলো।