রাবিপ্রবি’তে ‘রেড ক্রিসেন্ট বেসিক ও ফার্স্ট এইড’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ মানুষের সেবা করাই মানুষের মূলনীতি হওয়া উচিত —-প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান

রাঙ্গামাটি

\ নিজস্ব প্রতিবেদক \

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাব ও রাঙ্গামাটি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট-এর যৌথ উদ্যোগে ‘রেড ক্রিসেন্ট বেসিক ও ফার্স্ট এইড’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান। প্রশিক্ষণে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাবিপ্রবি’র প্রক্টর ও ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন, রাঙ্গামাটি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট-এর সহ-সভাপতি এস এম শফিউল আজম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল।

বিশেষ অতিথি নোবিপ্রবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে, লাইব্রেরীতে, শ্রেণীকক্ষে ও ল্যাবে সচেতন আচরণ ও করণীয় বিষয়ে প্রাথমিক ধারণার মধ্য দিয়ে সচেতনতা ও নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আবারও রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সকালের পাহাড়-লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশের দৃষ্টি নান্দনিকতায় তাঁর মুগ্ধতার কথা বলেন। ক্যাম্পাসের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ আয়োজনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থী মুখর দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি নোবিপ্রবি’তে ভ্রমণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, জীবন অমূল্য; জীবন ব্যতীত সকল দুর্ঘটনার ক্ষতি কোন না কোন সময়ে পূরণ করা সম্ভব কিন্তু জীবনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। তাই জীবনের পাশে দাঁড়াতে হবে, মানবতার পাশে দাঁড়াতে হবে। আজকের এই প্রশিক্ষণ নিশ্চয়ই আমাদের এ শিক্ষার্থীদেরকে মানবতার প্রতি, সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি দায় ও দায়িত্ব সচেতন করে তুলবে এবং তারা সমাজে ভালো ও সৎ মানুষ হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সকল নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাঙ্গামাটি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট-এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল বলেন, আমরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় রেড ক্রিসেন্টের নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি ও কার্যক্রম বাড়াতে; তারই অংশ ও ধারাবাহিকতায় আজ এই প্রথম রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রম শুরু হল এবং এ ধারা আরও সক্রিয় ও কার্যকরীভাবে একসাথে কাজ করে যাবো। তিনি বলেন এটি একটি সেচ্ছাসেবী আন্তর্জাতিক সংগঠন, আমরা আর্তমানবতার সেবায় কাজ করি; সকল দুর্যোগ তা মানবিক কিংবা প্রাকৃতিক যাই হোক না কেন তা মোকাবেলার জন্য ছুটে যাই। আজকের এ প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা যে চলার পথ শুরু করল তা অত্র অঞ্চলের আর্ত মানবতার সেবায় বিশেষ অবদান রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ আয়োজনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমানকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরও বলেন, আমাদের পার্বত্য এ অঞ্চলে অনেক বড় বড় প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয় কিন্তু মানবতার সেবায় এরূপ প্রজেক্টের অভাব রয়েছে। এ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি সকলকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আহবান জানান।

রাবিপ্রবি রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের মডারেটর, প্রক্টর ও ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন আজকের এ উদ্যোগকে ও অতিথিদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সকল শিক্ষার্থীদের সেচ্ছাসেবায় ও মানবসেবায় আতœনিয়োগ করার আহবান জানান; যা একজন শিক্ষার্থীকে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্র ও পরিবারের প্রতি মানবিক আচরণে উত্তীর্ণ করবে। এ সংস্থাটি দেশ-বিদেশে সকল সময়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত; আজকের এ প্রশিক্ষণ আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে এ মানবিক বিষয়টি আরও সক্রিয় করে তুলবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি শিক্ষার্থীদের তাদের ক্লাবসমূহের কার্যক্রম বাড়াতে বলেন এবং সকল সহশিক্ষা কার্যক্রম ক্যাম্পাসের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রেখে আয়োজন করার আহবান জানান।

এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের সভাপতি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, মানুষের সেবা করাই মানুষের মূলনীতি হওয়া উচিত; যে সকল সংস্থা মানুষের সেবার, মানবিক সেবার কাজে নিয়োজিত সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অন্যতম। এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকার কারণে তিনি রাবিপ্রবি’র এ সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও কিভাবে সক্রিয় ও কাজের পরিধি বৃদ্ধি করা যায় তার নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির ৭টি মূল নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মূলনীতিগুলো হলোঃ মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছাসেবা, একতা ও সার্বজনীনতা। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-অঞ্চল নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবা করার মনোভাবের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সামর্থের মধ্যে যা করণীয় তা করতে পিছ-পা হবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক পাসকৃত শিক্ষার্থীদের সব ক্লাবকে অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার জন্য বাজেটের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও যথাসাধ্য অনুদান প্রদান করা হয়, এমনকি কখনও কখনও ডিসক্রিশনারি ফান্ড থেকেও তা প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলো সক্রিয় হয়ে উঠুক এটা আমি চাই; আমরা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাঙ্কিং প্রক্রিয়ায় নেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কাজগুলো র‌্যাঙ্কিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি বছরের পর বছর ধরে মানুষের প্রতি যে অন্যায়-অত্যাচার-গুম-খুন করে রাষ্ট্রকে অমানবিক করে তোলা হয়েছিল তা থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি; আজকের এই মানবিক বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই; জুলাই’২৪ গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন । প্রসঙ্গক্রমে তিনি ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাধ্যমে ‘অতিথি কীভাবে পরিচালনা করবেন’ বিষয়ে এক প্রশিক্ষণ আয়োজনের আগ্রহের কথা বলেন। ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক শিক্ষা-সংস্কৃতি-উন্নয়ন-মানবতাসহ অন্যান্য ইতিবাচক বিষয়ে কার্যক্রম বাড়ানোর উপর গুরুত্ব প্রদান করেন এবং প্রতিনিয়ত অংশীজন বাড়ানো বিশেষ আগ্রহের কথা বলেন। তিনি এ প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

সভার শুরুতে রাবিপ্রবি রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের লিডার জিসান আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং এ আয়োজনের আর্থিক ও সার্বিক নির্দেশনা ও সহযোগিতার জন্য মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ও অতিথিবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান। এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন, রাঙ্গামাটি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট-এর মোঃ আল মাহমুদ, মোঃ ফাহিম উদ্দীন, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এবং রাবিপ্রবি’র রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের ইয়ুথ লিডার মোঃ তানভির। অনুষ্ঠানটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন রাবিপ্রবি’র রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের ইয়ুথ লিডার জিসান আহমেদ ও উপস্থাপনা করেন ডেপুটি লিডার উম্মে সালমা লাবণ্য। এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাবিপ্রবি রেড ক্রিসেন্ট ইয়ুথ ক্লাবের সকল সদস্য। প্রশিক্ষণ শেষে সকলকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান।