\ নিজস্ব প্রতিবেদক \
রাঙ্গামাটির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী যোগাশ্রম, ভেদভেদী সভাপতি কুশল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়ম বর্হিভূতভাবে খরচ গ্রহণ, মন্দিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সহ মন্দিরের দান বাক্সের টাকা হিসাব কোষাধ্যকে না দেয়ার অভিযোগ তুলেন নির্বাচিত অর্থ সম্পাদক ও সহ অর্থ সম্পাদক সহ কমিটির একাধিক নেতৃবৃন্দ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচিত অর্থ সম্পাদক ও সহ অর্থ সম্পাদক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী যোগাশ্রমের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। এই অনিয়মের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সাময়িক ঘটনা মিমাংসা করে নতুন কমিটি গঠনের জন্য মন্দিরের উপদেষ্টা কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ বক্তারা।
সাধারণ বক্তবৃন্দ বলেন, এই মন্দির ভক্তবৃন্দের দান ও অনুদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে কিছু সংখ্যক মানুষ এই মন্দিরকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। মন্দিরের কোন আয় ব্যয় সঠিক ভাবে তাদের কাছে নেই। কেন এই অবস্থা হবে। বাবার ভক্তবৃন্দরা এই মন্দিরের জন্য কাজ করছে। যে যখন যা পারছে তা দিয়ে বাবার মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু কোন ধরনের নিয়ম শ্ঙ্খৃলা নেই। কোথা থেকে টাকা আসছে কোথায় কিভাবে ব্যয় করছে তার কোন সঠিক সদুত্তোর নেই। তারা কখন যে মিটিং করে তা কোন ভক্তবৃন্দ বলতে পারে না। শুধুমাত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠান আসলেই আমাদের কাছে আসে টাকার জন্য। আমরাও যে যা পারি দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তার পরও কোন মন্দির নিয়ে এতো লেখালেখি হবে। কেন বাবার টাকা কারো পকেটে থাকবে। সাধারণ বক্তবৃন্দরা বাবার মন্দিরের জন্য কাজ করছে কিন্তু কমিটির মানুষের কাদা ছোড়াছুড়ি আমাদের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।
এই বিষয়ে কমিটির সদস্য পান্না বিশ^াসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে মন্দিরের দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ চলছে। মন্দিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং অর্থ সম্পাদকের মধ্যে হিসাব নিয়ে দ্বন্ধ তাই এই লেখালেখি। আমরা এই রকম চাই না। আমরা এর একটি প্রতিকার চাই। তার জন্য প্রধান উপদেষ্ঠাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম আচার্য্যরে সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অর্থ সম্পাদক হিসাব চাওয়াকে নিয়েই দ্বন্ধ শুরু হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদেরক কাছে যে হিসাব রয়েছে তা অর্থ সম্পাদককে বুঝিয়ে দিবে। তাদের মধ্যে বোঝাপড়া না হওয়ার কারণেই দ্বন্ধটা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে সকল হিসাব নেয়ার জন্য অঞ্জন ধরকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করাহলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কোন হিসাব দেয়নি অর্থ সম্পাদক তার হিসাব উত্থাপন করে। কিন্তু মুল হিসাব থাকবে অর্থ সম্পাদকের কাছে তারা কমিটির সকল সদস্য আয় ব্যয়ের সকল হিসাব অর্থ সম্পদককে বুঝিয়ে দেবে অর্থ সম্পদ তা সঠিক ভাবে রক্ষণা বেক্ষণ করবে। তিনি বলেন এখানে হিসাব নিয়ে দ্বন্ধ আছে তাই আজ এই অবস্থা।
সহ সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন ধর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করে আসছি। বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে সাধারণ ভক্তবৃন্দ সহ সকলের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, তার পরও আমরা চেয়েছি মন্দিরের স্বার্থে সকলের মিলে মিশে কাজ করার জন্য। বর্তমান কমিটি আসার পর থেকে বিভিন্ন হিসাব নিয়ে যখন দ্বন্ধ শুরু হয়। কমিটির নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ থাকা স্বর্থেও তাকে কোন প্রকার সুযোগ না দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে ৭ মাসের হিসাব উত্থাপন করে। হিসাব উত্থাপন করবে কোষাধক্ষ্য তাই কমিটির কেউ মেনে নেয়নি। তখন আমাকে বিষয়টি মিমাংসার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পদককে পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করে কাজগপত্র জমা দেয়ার জন্য বলি। কিন্তু অর্থ সম্পাদক তার কাছে থাকা সকল কাগজপত্র প্রদান করলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উত্থাপন করেনি। পরবর্তীতে মিটিং আহবান করে আমাকে আবার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যজনকে দায়িত্ব প্রদান করে।
মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ ডাঃ রনজিত কুমার ধরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে কাজ করতে দিচ্ছে না। বিগত সময়ে মন্দির যেভাবে কোষাধ্যক্ষ থাকরেও তাকে ছাড়া চলেছে মন্দির। এখনো সভাপতি এইভাবে চলানোর চেষ্টা করছে। আমি কোষাধ্যক্ষ আমি সকল হিসাব চাইবার অধিকার আছে। আমার যদি কোথাও ভুল থাকে তাহলে আমাকে বলতে হবে। কমিটির মিটিং এ আমি হিসাব দেবে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসাব দেবে না। আমি যখন বেশ কয়েকটি বইয়ের হিসাব ও মন্দিরের দানবাক্সের হিসাব সহ বিভিন্ন বিষয়ে হিসাব চাওয়া শুরু করেছি তখনই আমি তাদের কাছে খারাপ হয়ে গেছি।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দিরের সভাপতি কুশল চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকে কমিটি নিয়ে কিছু মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। কোষাধ্যক্ষের দেয়া কিছু হিসাবের বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি রয়েছে। তাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার বসলেও তিনি সঠিক ভাবে হিসাব উত্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, কোষাধ্যক্ষ মন্দির ও আমকে হেয় করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু আপত্তিকর তথ্য উপস্থাপন করছেন। যার বিষয়ে আমি লিগ্যাল এইডে একটি মামলা দায়ের করেছি। আগামী কিছু দিনের মধ্যে এই মামলার শুনানী হবে। তিনি বলেন, আমার কাছে সকল তথ্য প্রমান রয়েছে। মন্দিরের উন্নয়নে আমি দীর্ঘ বছর কাজ করছি আমাকে বাদ দেযার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে।
মন্দিরের প্রধান উপদেষ্ঠা মাধব চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যতটুক জেনেছি হিসাব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ বেড়েছে। কমিটির হিসাব থাকবে কোষাধ্যক্ষের কাছে। কোষাধ্যক্ষ হিসাব উত্থাপন করবে। আসলে বাবার মন্দির আমরা চাই না কোন ধরনের কাদা ছোঁড়া ছুড়ি হোক। মন্দির সুন্দর চললে আমরাও খুশি। আগামী ১ আগষ্ট মন্দিরে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। আপনারা আসেন বসে মিমাংসা করা হবে।
সাধারণ ভক্তৃবৃন্দের দাবী মন্দির রক্ষার স্বার্থে যার দোষ হবে হোক তাকে কমিটি থেকে বের করে দিতে হবে। এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি দিতে হবে। আমরা কোন ধরনের দলাদলি চাই না। মন্দির মন্দিরের মতো নিরবিচ্ছিন্ন ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলবে। কেউ একটাকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বানাতে পারবে না। তাই মন্দির পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কমিটি করার জন্য প্রধান উপদেষ্ঠা সহ সকল মঠ মন্দিরের প্রতিনিধিদের প্রতি আহবান জানান ভক্তবৃন্দরা।