\ প্রেস বিজ্ঞপ্তি \
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত জটিল পরিস্থিতি, নানা দাবি-পাল্টা দাবি, পরীক্ষা স্থগিত পুনঃনির্ধারণসহ সার্বিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। সোমবার (২৪ নভেম্বর ২০২৫) পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিমল কান্তি চাকমা স্বাক্ষরিত এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে সাম্প্রতিক হরতাল, আন্দোলন, এবং আইনগত অবস্থান বিষয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও চাকরিবিধির আলোকে প্রক্রিয়া শুরু করে এবং ১৪ নভেম্বর ২০২৫ পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে। (৮ নভেম্বর) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার ঢাকায় উপস্থিত হয়ে পরীক্ষার নির্বিঘেœ আয়োজন সম্পর্কে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে আলোচনা করেন।
পরদিন (৯ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা, সচিব, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ডিপিইও উপস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭ হাজারের বেশি প্রার্থী, নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগেই পরীক্ষা সম্পন্নের প্রয়োজনীয়তা এবং পরীক্ষাকালে ৫টি বোর্ড গঠনের মতো বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার মতামত নেওয়া হয় এবং দ্রæত পরীক্ষার পক্ষে পরিষদ সম্মতি জানায়।
(১০ নভেম্বর) কোটা বিরোধী ঐক্যজোট ২৩ জুলাই ২০২৪ তারিখের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুসরণের দাবি জানিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
পরে ১১ নভেম্বর চেয়ারম্যান পরীক্ষা স্থগিত করেন।
১৬ ও ১৭ নভেম্বর দুই পক্ষ থেকেই নতুন স্মারকলিপি আসে একপক্ষ মেধা ও ৭% কোটা দাবি করে, অন্যপক্ষ বিদ্যমান আঞ্চলিক আইনি কাঠামো অনুসরণে নিয়োগের দাবি জানায়।
১৮ নভেম্বর জেলা পরিষদ ২১ নভেম্বরের নতুন পরীক্ষা তারিখ ঘোষণা করে।
কিন্তু ১৯ নভেম্বর কোটা বিরোধী জোট ২০-২১ নভেম্বর হরতালের ডাক দেয়, যা বড় ধরনের অস্থিরতার আশঙ্কা সৃষ্টি করে। ফলে ২০ নভেম্বর জেলা পরিষদ আবারো পরীক্ষা স্থগিত করে।
বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদ স্পষ্ট করে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী সরকারি/আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসী উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
২০১৩ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে একই বিধান পুনরায় উল্লেখ আছে।
জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯-এর ৩২(২) ধারায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে স্থানীয় উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ যাবৎ তিন পার্বত্য জেলাতেই একই বিধান অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে আসছে।
পরিষদ জানায়, ২৩ জুলাই ২০২৪-এর সাধারণ কোটা প্রজ্ঞাপন পার্বত্য চট্টগ্রামে কখনোই প্রযোজ্য হয়নি এবং আইনের ভিত্তিতেও প্রযোজ্য নয়।
খাগড়াছড়ির অনিশ্চয়তা ও মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পদক্ষেপ:
১৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে একই কোটা প্রজ্ঞাপন কার্যকরের দাবি ওঠায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে আইনগত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
২০ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোটা পদ্ধতি পার্বত্য জেলায় প্রযোজ্য হবে কিনা—এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক পরিষদ আশা প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন এবং ২০১৩ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ হয়ে আসছে, সেভাবেই ভবিষ্যতের সব শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সরকার দ্রæত স্পষ্ট নির্দেশনা দেবে।
পরিষদ মনে করে এটি জনস্বার্থ, স্থিতিশীলতা এবং অঞ্চলের আইনগত কাঠামো রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

