\ নিজস্ব প্রতিবেদক \
কে আসছেন পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর না কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এই নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে না না গুনজন। পার্বত্য মন্ত্রনলয়ের দায়িত্ব নিতে তিনই দারুন লবিং শুরু করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে কে আসনে সেটা দেখার বিষয়। আজ সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ হলে আগামীকাল মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম খ্যাত রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের মনোনীত তিন প্রার্থী বিপুল ভোটে এবারের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। সব চেয়ে বেশী ভোট পেয়েছেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। তিনি গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ভোট বেশী পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির পর থেকে তিন পার্বত্য আসন থেকে সাধারণত দেয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। তবে এবার কার ভাগ্যে জুটছে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, এ নিয়ে চলছে তিন জেলায় সাধারণ মানুষের মাঝে গুঞ্জন। চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে।
পাহাড়ের জনগনের ভালোবাসায় ২৯৮ নং আসন খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ২ লাখ ২০ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়েছেন, ২৯৯ নং আসনে দীপংকর তালুকদার ভোট পেয়েছেন রাঙ্গামাটি ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৫০৪ ভোট, ৩০০ আসনে বান্দরবান বীর বাহাদুর পেয়েছেন ১ লাখ ৭২ হাজার, ৬৭১ ভোট।
খাগড়াছড়ি ২৯৮ আসনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বিজয়ী হন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক (টাস্কফোর্স) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাঙ্গামাটি ২৯৯ আসন হচ্ছেন একটি জঠিল আসন। বরাবরই দীপংকর তালুকদারকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও জাতীয় রাজনৈতিক দলের সাথে তুমুল যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে। যত ঘাত প্রতিঘাত এসেছে এই আসনটির উপরই এসেছে। বরাবরের মতো আওয়ামীলীগ দলকে ধরে রেখেছেন দীপংকর তালুকদার। দীপংকর তালুকদার ৭ম বার নির্বাচন করে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০১ সালে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস এর সমর্থন নিয়ে আওয়ামীলীগকে হারায় বিএনপির মনি স্বপন দেওয়ান। ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্তন নিয়ে জেএসএসের উষাতন তালুকদার দীপংকর তালুকদারকে পরাজিত করে। পরে ২০১৮ সালে হাড্ডা হাডি লড়াইয়ের মাধ্যমে সিটটি আবারো শেখ হাসিনাকে উপহার দেয় দীপংকর তালুকদার।
অপরদিকে বান্দরবান ৩০০ আসনে বীর বাহাদুর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে তিনি ২০০৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
পার্বত্য চুক্তির আলোকে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্প রঞ্জন চাকমা। পরবর্তীতে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সরকারের আমলে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য মনি স্বপন দেওয়ান উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে টানা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিং। শুরুতে প্রতিমন্ত্রী হলেও পরবর্তীতে ২০১৮ সালে পূর্ণ মন্ত্রী হয়ে টানা নয় বছর ধরে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে।
এবার জিতে যাওয়ায় আশা রেখেছেন পাহাড়ের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ দীপংকর তালুকদার। সমস্ত জল্পনা-কল্পনা তাকে ঘিরেই।
তবে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, দীপংকর তালুকদার শেখ হাসিনার প্রিয় মুখ। দীপংকর তালুকদারকে যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না দেয়া হয় তখন অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রির দায়িত্ব হয়তো তাকে দেয়া হবে। সে আশাবাদ সাধারণ জনগনের।