নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্ধ চরমে-২

বিবিধ

শ্রমজীবি থেকে কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন নানিয়ারচর আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

শূন্য হাতে বুড়িঘাটে এসে শ্রমজীবি কাজ করে বুদ্ধিমত্তা ও দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার এমনটাই অভিযোগ করেন স্থানীযরা। তিনি ২০০০ সালে এসে কী করেছেন কার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন তার দুর্নীতির পাহাড় সবম অভিযোগ তুলে ধরেছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও চাকুরী, প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ সহ নানান অভিযোগ তুলে ধরেন স্থানীযরা।

২০২১ সালে তৎকালীণ সভাপতি ত্রীদিব কান্তি দাশকে পদ থেকে সরাতে ইলিপন চাকমার হাত ধরে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হয়ে গেলেন আব্দুল ওহাব হাওলাদার। এরপর থেকে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত দুই বছরে তার দুর্নীতির পাহাড় সম অভিযোগ উঠে আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে।

এবার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরী হওয়ায় প্রকাশ্যে আসে তাদের দুর্নীতির তথ্য। মুখ খুলতে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ জনগন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের গাভি প্রকল্পের গাভি পাওয়ার জন্য জনগন থেকে টাকা নেয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নেয়া, টিউবওয়ে দেয়ার নাম করে টাকা নেয়া, ভিজিএফ কার্ড তৈরী করে টাকা নেয়া সহ নানান অভিযোগ ওহাবের রিরুদ্ধে।

রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি মো: আব্দুল ওহাব হাওলাদারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য এসব খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না প্রভাবশালী নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা জানালেন এসব বিষয় জানলেও উপজেলা পর্যায় থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবার সুযোগ নেই।

বুড়িঘাট ইউনিয়নের নুরু মিয়া বলেন, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ২০০০ সালে রাঙ্গামাটি আসার পর ছিলেন দিনমজুর। অথচ এখন অনেক অর্থ ও সম্পদের মালিক বনেছেন, আছে বিপুল পরিমান জমিও। নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদারের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করেই এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভ’ক্ত ভোগীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিনামূল্যে সরকারী ঘর,সরকারী চাকরী, বিদ্যুৎ সংযোগ, মৎস্য বাঁধ, ভিসিএফ কার্ড সহ সরকারী নানা প্রকল্পের সুবিধার দেয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যেসব সুবিধা টাকার বিনিময়ে দেয়ার কথা তাতো পানই নি, ফেরত পাননি টাকাও।

বয়স্ক এক মহিলা বলেন, নিজেদের অভাব গোছাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে গরু দিচ্ছে জেনে ওহাবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ১০ হাজার ৫০০ টাকা দাও গরু পাবা। তখন তার কাছে টাকা তুলে দেই। কিন্তু গরু দেয়নি। আবার বলে তোমাকে গরুত দিতে পারিনি প্রধানমন্ত্রীর ঘর দিবো আরো ৫০ হাজার টাকা দাও। তখন ঘর পাওয়ার আসায় মানুষের কাছ থেকে লোন করে ৫০ হাজার টাকা দেই। ঘর আজকে দেবে কালকে দেব বলে আমাকে এখনো ঘুরাচ্ছে। অপরদিকে টিউবওয়েল ও ভিজিএফ কার্ড দেয়ার নাম করে আরো ২৬ হাজার টাকা মোট ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে আজ ২ বছর হয়ে গেলো কিন্তু একনো পর্যন্ত ঘর দেয়ার নাম গন্ধ নেই। আমি আমার টাকা ফেরত চাচ্ছি।

এসব টাকা দীর্ঘদিন ধরে ফেরত চাওয়ার পর তা ফেরত না দিয়ে উল্টো ক্ষমতার জোরে ওহাব বিভিন্ন ধরনের হুমকী দেন সবসময়। ভয়ে কেউ কথাও বলতে সাহস পান না।

৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড, মোঃ মিজানুর রহমান (মেম্বার) বলেন, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে বুড়িঘাটতে আব্দুল ওহাব হাওলাদার। তার দুর্নীতিতে ছোট বড় কোন রেহায় পায়নি। ঘর দিবে বলে টাকা নিছে, বিদ্যুতের মিটারের জন্য প্রতি ঘর থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন বোর্ড থেকে গরু দেয়া হয়েছে তা তিনি প্রত্যেক জন থেকে টাকা নিয়ে গরু দিয়েছে। কোন মানুষ সমস্যায় পড়লে তাকে টাকা ধার দেয়। কিছুদিন পরে টাকা দিতে না পারলে তার জমি জোর পূর্বক লিখে নেয়া সহ নানান অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগের সভাপতি তাকে কিছু বলা যাচ্ছে না। কিছু বললে থানা পুলিশ, আর্মির ভয় দেখায়।

এই বিষয় নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: আব্দুল ওহাব হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আমি রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর যখন আসি তখন ঢাকায় আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। বুড়িঘাটে কোন আওয়ামীলীগ ছিল না। আমি আসার পর আজ যারা আওয়ামীলীগের জন্য প্রাণ দিচ্ছে তাদেরকে আমি দলে যোগদান করিয়েছি। আজ দীপংকর তালুকদারের হাত শক্তিশালী হয়েছে বলেই একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, আমার জায়গা আছে এটা শত্য আমি কৃষি কাজ করে বাড়ী থেকে টাকা এনে জায়গা ক্রয় করেছি। এছাড়াও আমি যে জায়গা গুলো ক্রয় করেছি তা হচ্ছে একর ১০ হাজার টাকা ১৫ হাজার টাকা দরে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি আওয়ামীলীগ করে নিজের ক্রয়কৃত ৭ একর জায়গা বিক্রি করতে হয়েছে দল চালাতে। আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় এবং দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও দলীয় নেতাকর্মীদেরকে অনুষ্ঠানে আসতে নিরুৎসাহিত করায় তার বিরুদ্ধে কথা বলাতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনা ও দীপংকর তালুকদারের নির্দেশে আওয়ামীলীগের কার্যক্রম বাস্তাবয়ণ সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে নায়িারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা যদি সঠিক ভাবে প্রমানিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ও আওয়ামীলীগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা করবে।