নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্ধ চরমে-১

রাঙ্গামাটি

নানিয়ারচর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা’কে পদ হইতে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্ধ চরমে পৌছেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের জাতীয় প্রোগ্রামে আসতে বারণ করায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমাকে দল থেতে অব্যাহতি প্রদান করতে জেলা কমিটির কাছে পত্র লিখেছে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ। তার এ অসৌজন্য মুলক আচরণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এজেন্ডা নয় বরংচ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।

রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বরের হাতে দেয়া অভিযোগ পত্রে বলা হয় রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা, দলীয় বিরোধী কর্মকান্ড করা, দলের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করা ও দলীয় সকল নেতাকর্মীদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করায় বিগত (১৬ এপ্রিল) নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সদস্যর একমত ও উপস্থিতি সবার সর্বসম্মতিক্রমে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ হইতে অব্যাহতির জোর দাবী তোলেন নেতৃবৃন্দ। যার ফলশ্রুতিতে রেজুলেশন সহকারে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের বরাবরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এছাড়া ইলিপন চাকমার বিরুদ্ধে জায়গা জমি একোয়ার, এক জায়গাকে ৩ বার বিক্রি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ ও আত্মীয় স্বজনের নামে ৩ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার কাজ করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। এই অভিযোগ গুলো ক্ষতিয়ে দেখে দ্রুত বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের উর্দ্ভতন নেতৃবৃন্দের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতৃবৃন্দরা।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে অব্যাহতির আবেদনের সাথে কার্যনির্বাহী সভার রেজুলেশন সহ জমা দেন।

অভিযোগে নাণিয়ারচর উপজেলার আওয়ামীলীগের ৭১ জন সদস্য্যের মধ্যে ৫১ জন সদস্য অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগে বলা হয় দলীয় কার্যক্রম ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের লোকজনের মধ্যে গতিশীলতা বাড়াতে সভাপতির কর্তৃক সভা আহবানের কথা বলা হলেও মিটিং না ডাকা, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ না করা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রোগ্রামে আসতে নিরুৎসাহিত করা, ইউপি নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীদেরকে সহযোগিতা না করা অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে খাদ্য শস্য বরাদ্ধের নয় ছয়ের অভিযোগ করেন ইলিপন চাকমার বিরুদ্ধে।

সভায় উপস্থিত সকলেই ইলিপন চাকমা নেতাকর্মীদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ, নানিয়ারচর আওয়ামীলীগকে কোন্দলে পরিনত করাসহ দলীয় এমনকি জাতীয় কর্মসূচি পালনে যে অনীহা তারই বিষয়ে সকলেই বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। তাছাড়া তিনি দলীয় বা জাতীয় কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি সভা না করার ফলে অনেক সময় তাহার সাথে দলীয় কর্মীদের বহুভাবে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ার কথা তোলেন। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নানিয়ারচর উপজেলার নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার কথা জানালেও মুষ্টেমেয় ইলিপন চাকমার স্বপক্ষের কয়েকজন লোকজনকে অনুদান প্রদান করে ৯০ শতাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীও তাদের স্বপক্ষের লোকজনের পেট ভরিয়েছেন। এতে করে বোঝা যায় তিনি কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

অভিযোগের বিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিপন চাকমা কাজে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে একটি হচ্ছে দলীয় ষড়যন্ত্র। ২৪ মে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়াীলীগের কাউন্সিলে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদককে ভোট না দেয়ার কারণে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ত্রিদীব কান্তি দাশের ষড়যন্ত্রের স্বীকার আমি। তিনি বলেন, দলের সকল কর্মসূচী আমার দেয়া অর্থ ছাড়া বাস্তবায়ন করা হয় না। আমি যতক্ষন টাকা দেই ততক্ষণ তারা প্রোগ্রাম করেন।

তিনি বলেন, আগামী পবিত্র ঈদের পর রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ হবে। এই নিয়োগের লোভে একটি সিন্ডিকেট দল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি কোন নিয়োগ বাণিজ্য করিনি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব চাকুরি বানিজ্য, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী পরিবার সমূহ থেকে অর্থ গ্রহণ, নারীদের কুপ্রস্তাব দেয়া, একজন সাধারণ মানুষ থেকে কি ভাবে প্রায় ১০০ একর জমির মালিক হয়। বিভিন্ন জনের ভুয়া আইডি দেখিয়ে হেডম্যানের স্বাক্ষর জাল করে তিনি এই সকল করেছে। তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের স্বীকার। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শ্রদ্ধেয় এমপি দীপংকর তালুকদার এখন ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি আসলে এই বিষয় গুলো নিয়ে ওনার সাথে খোলাখুলি কথা বলা হবে।

রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সভার একটি রেজুলেশন সহ অভিযোগ আমি পেয়েছি। আসলে সাধারণ সম্পাদকের কথোকপোথনের একটি অডিও বার্তাও আমার হাতে এসে পৌছেছে। সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি জাতীয় প্রোগ্রামে কাউকে আসতে নিরুৎসাহি করতে পারে না। এটি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। তিনি দলীয় নির্বাচনের যে কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। তিনি কাকে ভোট দেবেন সেটা তার ব্যাপার। তার বহিস্কারের বিষয়ে আমিতো একক ভাবে কোন কথা বলতে পারবো না। দলীয় বৈঠকে এর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তা আপনারা পরে জানতে পারবেন।