॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী উৎসবের শুরু হয়েছে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে আজ থেকে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব।
বুধবার (১২এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটির গর্জনতলীতে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের উদ্বোধন করেন, খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ,২৯৯নং সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি। এসময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবী উদযাপন কমিটি উদ্যোগে ভোরে গ্রামের তরুন তরুনীরা ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে তিন দিন উৎসবের সূচনা করা হয়। রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবি উৎদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল বিজুর উদ্বোধন করেন বৈসাবী উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃত রঞ্জন চাকমা,এ সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমাসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থত ছিলেন।
ফুল ভাসানো দেখতে আসা এক বাঙ্গালী নারী আর্জিয়া আলম বলেন্, পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক উৎসব বৈসাবি যেন সকল সম্প্রদায়ের উৎসব। ফুল ভাসাতে এসে এখানে মনে হচ্ছে না আমরা বাঙ্গালী। আমাদের মনে হচ্ছে আমরাও এদের একজন।
বিজু, বৈসু, সাংগ্রাইং-২০২৩ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব না করলেও রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এবছর উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। এই ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়েই শুরু হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মূল বিজু পালিত হয়। শুক্রবার গোজ্যেপোজ্যে দিন পালিত হবে যার যার ঘরে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবী উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চলের এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায় যাতে এক হয়ে সন্দুর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে সেই দিকে আমাদের সকলের প্রত্যাশা থাকবে।
খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার দেশে রূপান্তর করেছে। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুল অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সম্প্রদায়ের বসবাস। এখানে বাঙ্গালী, চাকমা, মারমা ত্রিপুরা, পাংখোয়া বম সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পাহাড়ের মানুষও উজ্জীবিত। তিনি সকলকে বৈসাবীর শুভেচ্ছা জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাবর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। আগামীকাল মুল বিজুর উৎসব পালন করবে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না করে অতিথি আপ্পায়নের মধ্যদিয়ে মুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যদিয়ে পাহাড়ের এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।