॥ নন্দন দেবনাথ ॥
আস্থা অনাস্থায় আজ পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পরও সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মাঝে টানা পোড়েন ও দুরত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহিত সমিতির দুরত্বে মাঝে পার্বত্য চুক্তির ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে রাঙ্গামাটির সচেতন মহল। সরকারের একটি পক্ষ চলছে পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজীর কারণে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের মুল বাঁধা। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের সদিচ্ছা না থাকার কারণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলে হস্তাগ্রস্থ মানুষ গুলো অস্ত্র তুলে নেয়ার কারণে নতুন নতুন দল তৈরী হচ্ছে। এই অবস্থায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার ও পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক সংগঠন গুলোকে নিয়ে আবারো বসার কথা বলছেন সচেতন মহল।
দীর্ঘ ২৫ বছরও পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ চরম উদ্বেগে রয়েছেন। পাহাড়ী বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের মাঝে আস্থা অনাস্থা প্রতিনিয়ত বিরাজ করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় পাহাড়ী বাঙ্গালীদের মাঝে আস্তার সংকট থাকলেও পার্বত্য রাঙ্গামাটির পুরাতন বাসিন্দাদের সাথে তাদের সক্ষ্যতা রয়েছে অনেক বেশী। পাহাড়রে পাহাড়ী বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায় এই অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল পক্ষকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের চুক্তির ফলে পাহাড়ে এখনো শান্তি আসেনি। পাহাড়ে এখনো স্বাধীন ভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ করা ও পাহাড়ের মানুষের অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষের শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবী জানানো হয়।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাগ চুক্তির ফলে পাহাড়ের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ছিলো। কিন্তু চুক্তির পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ের আদিবাসীদের অধিকার বাস্তাবায়ন হয়নি। তাই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার দাবী জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুল হক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালীরাও চায় চুক্তি বাস্তবায়িত হোক। তবে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে যে ধারা গুলোর দ্বারা বাঙ্গালীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেই ধারা গুলে বাতিলের দাবী জানাচ্ছি। আমরাই চাই পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষে মিলে মিশে বসবাস করুক।
রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে মুল বাধা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র, অবৈধ অস্ত্রে কারণে পাহাড়ে চাঁদাবাজী দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারছে না। পাহাড়ের মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার আন্তরিক হলেও জনসংহতি সমিতি পার্বত্য অঞ্চল থেকে আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। পাহাড়ের শান্তি চুক্তি করেছে আওয়ামীলীগ সরকার বাস্তবায়নও আওয়ামীলীগ সরকার করবে এখনো অন্য কেউ এসে চুক্তি বাস্তাবয়ন করবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানান, চুক্তির পর এখানে যে একেবারেই উন্নয়ন হয়নি তা বলা যাবে না। উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু তা যান্ত্রিক। চুক্তিতে বলা রয়েছে আঞ্চলিক পরিষদের কাছে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো ন্যাস্ত থাকবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো কখন কি কাজ করছে তা আঞ্চলিক পরিষদকে জানানো হচ্ছে না। যার কারণে সূষম উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যতটুকু উন্নয়ন মানুষ ভোগ করার কথা তা ভোগ করতে পারছে না। চুক্তি সকল ধারা বাস্তবায়িত হলে মানুষ সূষম উন্নয়নের ফল মানুষ ভোগ করতে পারবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমিও বলছি পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কোন অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠন নেই। আর যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হয়তো অহাতাশা গ্রস্থ কিছু লোক। যারা চুক্তি বাস্তাবয়ন না হওয়ায় হতাশা গ্রস্থ হয়ে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার তাদের নিষিদ্ধ করুক। আমরা অস্ত্র উদ্ধারে সহযোগিতা করবো।
২৯৯নং রাঙ্গামাটি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য, দীপংকর তালুকদার জানান, ১৯৯৭সালের ২রা ডিসেম্বর যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তার মাধ্যমে রাঙ্গামাটির আত্মসামাজিক উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার শান্তি চুক্তি করেছিল এবং শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য কাজ করছে। শান্তি চুক্তির ফলে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য রাস্তাঘাট, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় করা হয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য সমতল এলাকার মানুষের মত পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের সকল অধিবাসিদের পক্ষে চুক্তি সম্পাদনকারী জনসংহতি সমিতি বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে।
পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে সংগঠন গুলো এই আবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দিচ্ছে। কিন্তু হটলরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর যদি গুলি করে তাহলে আইন শৃঙ্খলা বানিহীতো বসে থাকবে না। সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মারা যাচ্ছে এটা ভাবা যায়। সেনাবাহিনীও পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে।