॥ নিজস্ব প্রতিবেদক, লংগদু ॥
লংগদু উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতাকে পিটিয়ে আবারো আলোচনায় আসলেন লংগদু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার। গতকাল সকালে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা বেলাল হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। এই ঘটনায় তাৎক্ষনিক প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হোসেন আলী বলেন, আমি এবং মারধরের শিকার মাইনীমূখ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন উপজেলা পরিষদের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার। তিনি বেলালের সাথে বাকবিতন্ডতায় জড়ান এবং এক পর্যায়ে বেলালের উপর চড়াও হয়ে চর থাপর মারতে থাকেন। আমরা তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে সে এবার পায়ের জুতা দিয়ে বেলালকে মারেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই হতবাক। এরপর আমরা বেলালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আমি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তখন তিনি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি তার নিজের বাড়িতে বসে করেন। সেখানে অনেক পুরনো সদস্যকে রাখা হয়নি। মাইনীমূখের হাজাছড়া এলাকার নুরুল ইসলাম নামের এক মুরব্বিকেও সেই কমিটিতে রাখা হয়নি। কেন কমিটিতে রাখা হয়নি ওই মুরব্বি আমার কাছে জানতে চাইলে আমি বলেছি কমিটি বারেক সরকার তার বাড়িতে বসে করেছেন। আমাদের সাথে কোনো পরামর্শ করেনি। কেন আপনাকে রাখেনি এই প্রশ্নের জবাব বারেক সরকার দিবে। হয়তো ওই মুরব্বি এই কথাগুলো বারেক সরকারকে জানিয়েছেন আর এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর চড়াও হয়েছেন।
ঘটনার সময় রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু জানান, “তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ নেতা বেলালের উপর যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকারকে গত ফেব্রয়ারিতে দলীয় সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। আজকের ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিস্কারের ব্যবস্থা নিতে আমরা জেলা কমিটিকে লিখিত আবদেন করবো। তিনি যা করছেন তাতে করে ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগ করার মতো আর কোনো পথ রাখেননি। আমরা আমাদের অভিভাবক দীপংকর তালুকদার এমপি মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, আমি কৃষি ব্যাংক থেকে তিনলক্ষ টাকা নিয়ে অফিসে ফিরছিলাম এমন সময় বেলাল ও হোসেন আলী আমার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তখন তাদের সাথে হাতাহাতি হয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। লংগদু সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্তাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল আলী, সহসভাপতি হোসেন আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল মামুন খান প্রমূখ।
প্রতিবাদ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের সদস্য আছমা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুভাষ চন্দ্র দাশ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর হোসেন, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস ছালাম খা প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর বারেক সরকার লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির বহিষ্কৃত সভাপতি। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় সে সহ ছয় নেতাকে সাময়িকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়,সে আদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।