মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে—নিখিল কুমার চাকমা
॥ শিপ্রা দেবী ॥
ভিক্ষু সংঘের হাতে চীবর উৎসর্গের মধ্যে দিয়ে নানিয়ারচর উপজেলার রত্নাংকুর বনবিহারে ২৫তম দানোত্তম কঠিন চীবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রতিচ্ছবিতে পুষ্পমাল্য প্রদান ও ভিক্ষু সংঘকে ফুলের তোরা দিয়ে বরণ মাধ্যমে শুরু হয় কঠিন চীবর দানের অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধ পুজা, বুদ্ধ মূর্তিদান, কল্পতরু দান, কঠিন চীবর দান, আকাশ প্রদীপ উৎসর্গসহ নানাবিধ দানের মধ্যেদিয়ে চীবর দানুষ্ঠানের ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বনভান্তের অমৃতময় বাণীর উদ্বৃতি দিয়ে পূণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা দেন, ফুরমোন আন্তর্জাতিক বন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির, রত্নাংকুর বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির বোধিপুর বনবিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ জিনবোধি মহাস্থবির, রাজবন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু ভদন্ত শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির ও ভদন্ত শ্রীমৎ সত্যপ্রেম মহাস্থবির।
এর আগে সকালে কল্পতরু ও কঠিন চীবরকে পুরো উপজেলা প্রদক্ষিণ করে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন পেশা শ্রেণির মানুষ। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিমুক্তি জ্যোতি ভিক্ষুসহ বিহারে অধিষ্ঠান করা মোট ৮ জন ভিক্ষুকে স্থবির বরণ ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতসুখ ও মঙ্গল কামনা বিশেষ প্রার্থনা পাঠসহ পাঁচ মিনিট নিরবতা( ভাবনা) পালন করেন পুণ্যার্থীরা।
দানানুষ্ঠানে প্রধান পুর্ণার্থী হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। বিশেষ পুর্নার্থী হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ইলিপন চাকমা, বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমল কান্তি দেওয়ানসহ অন্যান্য প্রমখ। এসময় অন্যাদের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন দেওয়ান দীপু, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পঞ্চশীল পাঠ করেন পাহাড়িকা চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, বুদ্ধের বানী মনে ধারণ করে মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এলাকার সুখ শান্তির প্রচেষ্টায় নিজেকে আবদ্ধ রেখে মৈত্রীময় ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তবেই আমাদের মাঝে শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে আমরা বসবাস করছি। সব ধর্মের মানুষ এখানে শান্তিপ্রিয়ভাবে মিলেমিশে বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই বলে আসছেন, ধর্ম যার যার উৎসব আমাদের সবার। আমরা সবাই এ নীতিতে বিশ্বাসী।
রত্নাংকুর বন বিহারে ২৫’তম শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব গতকাল বেইন ঘর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে। বেইন ঘর শুভ উদ্ভোদন করেন, রত্নাংকুর বন বিহারের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির ভান্তে।
এবারের চীবর দানে ১০৮ টি চরকা, ৭৩ টি বেইন স্থাপন করে গতকাল কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে বৌদ্ধ নারীরা উৎসর্গের জন্য মুল চীবর তেরী করে।অনুষ্ঠানকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।