বান্দরবান-রাঙ্গামাটিতে জঙ্গি সংগঠনের ৭ সদস্যসহ গ্রেপ্তার-১০, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

বান্দরবান

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥

বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সীমান্তর্বতী বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার” ৭জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় র‌্যাব-১৫ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিংকালে র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নতুন জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’র” শীর্ষ নেতাদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। এসব আস্তানায় হিজরত করা তরুণদের ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া বিভিন্ন জেলার ৫০ তরুণের তথ্য পায় র‌্যাব, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে বাড়িছাড়া কিছু তরুণ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৯টি বন্ধুক, ৫০ রাউন্ড গুলি, ৬২টি কার্তুজ কেইস, ১টি ওয়াকটকি, হাত বোমা ৬টি, মানচিত্র ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক।

পার্বত্য এলাকায় সাধারণ জনগণের উন্নয়ন ব্যাহত ও শান্তি শৃংঙ্খলা ভঙ্গে যারা জড়িত থাকবে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করবে সেই ধরণের সকল সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন-সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মৃত সৈয়দ আবুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মো. শাহ আলমের ছেলে ইমরান হোসেন সাওন (৩১), ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মৃত গোলাম কিবরিয়ার ছেলে কাওসার শিশির (৪৬), সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফজলুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জনু (২৭), বরিশালের মুলাদী উপজেলার নয়ন মৃধা নুরুজ্জামানের ছেলে ইব্রাহিম আলী (১৯), সিলেটের আতিকুল আলমের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক বাপ্পি (২৩), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আব্দুস সালামের ছেলে রুফুমিয়া (২৬), বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার লাল মুন সয় বুমের ছেলে জৌথান বম (১৯) ও স্টিফেন বম (১৯) এবং একই উপজেলার জিক বিল বমের ছেলে মাল সম বম (২০)।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার রাইক্ষ্যং ও বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া, শিপ্পি পাহাড়, রনিন পাড়াসহ কেউক্রাডং পাহাড়ের আশেপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সন্ত্রাস বিরোধী চিরুনি অভিযান চলছে। সমতল এলাকার একটি জঙ্গি সংগঠন পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এই অভিযান শুরু করে।

অভিযানে সেনাবাহিনীর সহস্রাধিক সেনা ও র‌্যাবের সদস্যরা অংশ নেয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করা হয়। দুর্গম এলাকায় এই অভিযানে প্যারা মিলিটারি সদস্যরাও অংশগ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরোধী বড় ধরনের অভিযান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।