খাগড়াছড়িতে পার্বত্য নারী সম্মেলন অনুষ্টিত হয়

রাঙ্গামাটি

শান্তি চুক্তির পর থেকে পার্বত্য এলাকায় তিন চীফ সার্কেল হেডম্যান, কাব্বারীদেরে সম্মান দিচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥

“পার্বত্য নারীদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করুন”এই শ্লোগানে উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্ক আয়োজনে এবং খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় ১১তম পার্বত্য নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার(২৮জুলাই)সকালে ক্ষুদে্রে নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা’র সভাপতিত্বে করেন।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা.এমপি ও প্রধান আলোচক হিসেবে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় এবং প্রদীপ প্রজ¦ল এর মধ্যে দিয়ে মং সার্কেল চীফ রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী অনুষ্টানের শুভ সূচনা করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা বিগত ৫০বছরে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। দেশ পরিচালনায় নারীরা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন।কিন্তু এখনো নারী-পুরুষের প্রকৃত সমতা অর্জিত হয়নি। এখনো অনেক নারীরা পরিবার ও সমাজের সহিংসতার স্বীকার হচ্ছেন।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্য,যৌন হয়রানী, সহিংসতার স্বীকার হচ্ছে।নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা তাদের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার পথে থমকে দিচ্ছে।দেশের আদিবাসী নারীরা এমনিতেই সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর উত্তরাধিকার আইন সমূহের মধ্যেও প্রতিফলন ঘটেছে। তাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিষয়গুলো নিজ নিজ ধর্মীয়্র ভিত্তিতে আইনী বিধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মুসলিম পারিবারিক আইন রয়েছে।হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হিন্দু আইন পারিবারিক আইন। ইসলাম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাদেও অন্যদের জন্য রয়েছে সাজেশন অক্টোবর ১৯৭৫।এ সকল আইনে নারীদের কিছু সম্পত্তি উত্তরাধিকার রয়েছে।কিন্তু এ আইনে নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সম-অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি।বরং নারী- পুরুষের সমধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।তাই সকল ধরনের নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার নিরসনে প্রথাগত ব্যবস্থায় সম্পত্তি তথা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব কিংবা পদ গ্রহনের আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির পর থেকে পার্বত্য এলাকায় তিন চীফ সার্কেল হেডম্যান ,কাব্বারীদেরে সম্মান দিচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনার জন্য বঙ্গ ভবনে নিয়ে গিয়ে ছিলো। পার্বত্য এলাকার পাহাড়ীরা নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্টান গুলি যাহাতে সম্মএনর সহিত পালন করার জন্য অনুরোধ করেন। নারীরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারলে,কোন আইন প্রয়োগ করে কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমেও সুফল পাওয়া যায় না।নারীরা কখনো দুর্বল নয়। নারীরা সর্বশ্রেষ্ঠা। নারীরা চাইলেই সবকিছু পারে,কিন্তু পুরুষরা চাইতে তা করতে পারে না। আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, শিক্ষামন্ত্রী নারী, বিমান চালক নারী সর্বক্ষেত্রে নারীদের জয়জয়কার।তাই নারীরা আজ পিছিয়ে নেয়।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা এডিসি রেভিনিউ কাজী মোঃ আলিম উল্লাহ,মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা,খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কে সাবেক সমন্বয়কারী শেফালিকা ত্রিপুরা,বান্দরবান জেলা হেডম্যান এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চাম্বী মোজার(বোমাং রাজার প্রতিনিধি) হেডম্যান টিমং প্রু মারমা,সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক জয়া ত্রিপুরা প্রমুখ।

এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলা হেডম্যান নেটওয়ার্ক সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা,খাগড়াছড়ি হেডম্যান এসোশিয়েশনের সভাপতি চাইথোয়াই মারমা,জেলা কার্বারী এসোশিয়েশনের সভাপতি রনিক ত্রিপুরা,সাধারণ সম্পাদক হেমরঞ্জন চাকমা,বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সুশীল জীবন ত্রিপুরাসহ তিন পার্বত্য জেলার নারী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।