॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
দুই ঘন্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানের সদ্য বিবাহিত প্রেমিক যুগলকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচালো রাঙ্গামাটি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পুলিশের কাছ থেকে তাদের জীবনের নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে চার তলার ছাদের বাইরের রড থেকে দুই ঘন্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের উদ্ধারে স্থানীয় লোকজন ও উৎসুক জনতা বারংবার চেস্টা করলে তারা মৃত্যু ঝুঁকি থেকে সরে আসেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা থেকে মৃত্যু জেনেও কারনিসের রডে দাঁড়িয়ে থেকে। পরে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেনের আশ^াসের প্রেক্ষিতে তারা মৃত্যু ঝুঁকি থেকে সরে আসে।
বৃহস্পতিবার (২১শে জুলাই) রাত সাড়ে ৭ টায় দোয়েল চত্বর সংলগ্ন ৫তলা ভবনের চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে রাঙ্গুনিয়ার মো. ওমর ফারুক ও খালেদা দম্পতি।
এবিষয়ে খালেদার সাথে কথা বলে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া খিলমোঘল এলাকার মো. সুমন নামের এক যুবকের সাথে খালেদা আক্তারের বিয়ে হয়। ওই সংসারে খালেদার ৮বছরের একটি ছেলে ও ৪বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। বিয়ের পর জানতে পারে সুমনের পরকিয়া প্রেমিকা রয়েছে। এর মধ্যে কয়ে দফা তাদের মধ্যে এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি হয়। পরবর্তি সময়ে সুমন বিদেশ গমন করে এবং বিদেশে গিয়েও ঐ মেয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
বিদেশে গিয়েও সে খালেদার সাথে তেমন যোগাযোগ রাখত না। পরে সে দেশে এসেও ঐ মেয়ের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ শুরু করে। এমন কি বিদেশ তেকে এসে সে বাড়ীতে না থেকে ঐ মেয়ের স্থানে রাত কাটায়। ইতিমধ্যে তাদের কল রেকর্ডে জানা যায় ঐ মেয়ে এখন অন্তসত্তা। এই নিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়ন চলে। স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় তার সাথে যোগাযোগ না রাখায় নিরূপায় হয়ে খালেদা বর্তমান স্বামী ওমর ফারুকের সাথে সে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
গত এক মাস আগে সে আদালতের মাধ্যমে সুমনকে ডিভোর্স দেয় এবং ওমর ফারুকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রাঙ্গামাটি শহরের দোয়েল চত্বর এলাকায় বসবাস শুরু করে। এর মধ্যে খালেদার ছেলে অসুস্থতার খবর পেয়ে সে তার বাবার বাড়ীতে যায়। পরে তাকে ঔখানে শারীরিক অত্যাচার করে। ছেলে সুস্থ হয়ে উঠলে সে কাউকে না জানিয়ে আবারো রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে পারি জমায়। পরে খবর পেয়ে সুমন তার আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে রাঙ্গামাটিতে খালেদাকে খুজতে এলে সে তাদের সন্ধান পায়। সন্ধান পেয়ে সুমন সন্ধ্যার দিকে যখন তাদের ধরতে আসে তখন ওমর ফারুক ও খালেদা ভবনের পেছনে বাড়তি রডে উঠে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় সুমন ও তাদের আত্মীয়রা যখন তাদের ধরার চেষ্টা করলে তারা লাফ দেবে বলে হুমকী দেয়।
প্রায় দুই ঘন্টাও বেশী সময় ধরে তারা ঐ ভবনের রডের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় সমুন স্থাণীয় লোকজনকে জড়ো করে। এ সময় দোয়েল চত্বরে কয়েক শত মানুষ জড়ো হয়। পরে সাবেক কাউন্সিলার নিয়াজ আহম্মেদকে খবর দিলে নিয়াজ এসে তাদের অনেক বোঝানোর পরও তারা ঐ মৃত্যু ঝুঁকি থেকে সরে আসে না। পরে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানা ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন তাদের সাথে কথা বলে আশ^াসের প্রেক্ষিতে তাদেরকে মৃত্যু ঝুঁকি থেকে উদ্ধার করে।
আত্মহত্যা করতে যাওয়া ওমর ফারুক (২৪) রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গোয়াছ পাড়া এলাকার মো. আজিজুল ইসলামের ছেলে। এদিকে খালেদা আক্তার (২৪) একই উপজেলার ধামাইরহাটের সোনারগাঁও এলাকার আবুল কালামের মেয়ে।
এঘটনায় ভবনের পেছনে তাদেরকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ২ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধ অভিযানে ওই দম্পতি উদ্ধার হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি কতোয়ালী থানার ওসি মো. কবির হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ১ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আমরা তাদের ২জনকেই উদ্ধার করতে সক্ষম হই। রাতে আমরা তদেরকে পুলিশি হেফাজতে রাখব। আগামীকাল তাদেরকে পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হবে।
জানতে চাইলে ওমর ফারুক জানায়, আমি খালেদা কে বিয়ে করেছি। তার সাথেই সংসার করতে চাই। খালেদার আগের স্বামী আমাদের কে খুঁজছে। সে আগে থেকে আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা উভয়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা বাংলাদেশ পুলিশের সাহায্য চাই।