॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
দলের উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দের বিরোধীতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লংগদু উপজেলায় ৭ টি সিট হারাতে বসেছে আওয়ামীলীগ। শক্ত অবস্থানে থাকা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে দুভাবে বিভাক্ত হয়ে গেছে। এই অবস্থায় সাধারণ জনগন কোন দিকে যাবে সেই আতংকে ভুগছে। সাধারণ ভোটাররাও চাপের মুখে আছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপের মুখে। লংগদু উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে কোনঠাসা হয়ে আছে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর কর্মী সমথর্করা এমনটাই অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা।
সাধারণ জনগন বলেন, পাহাড়ের রাজনীতির মেরুকরণে লংগদু উপজেলা ছিলো এক সময় বিএনপির ঘাটি। বিগত বছর গুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামরে অহংকার দীপংকর তালুকদারের দুরদির্শতায় লংগদু উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ঘুরে যায় সাধারণ মানুষের অবস্থান। সেই বিএনপির ঘাটিতে গত দুইবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান করে নেয়। বিপুল ভোটে এগিয়ে যায় আওয়ামীলীগ। শেষ নির্বাচনে লংগদু উপজেলার আওয়ামীলীগের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় বিপুল ভোট পড়ে নৌকার পক্ষে। এমপি নির্বাচনে বিশাল ভ’মিকা রাখে লংগদুর সাধারণ মানুষ। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় কোন্দল চরমে আসায় আবারো আঘাত হানতে পারে আগামীতে আওয়ামীলীগের জাতীয় নির্বাচনে।
সাধারণ ভোটাররা জানান, দলের সকল পদ যদি এক ঘরে চলে যায় তা কেমনে হবে। এক ঘরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান যদি তারা এক ঘরেই চায় তাহলে জনগন আর কোথায়। এখানে আর কেউ আওয়ামীলীগ করে না। এখানে শুধুকী তারাই আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তারা নিজেরা আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করুক আমরা চলে যায়।
দলীয় নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে সাধারণ ভোটারা ও দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের আত্মীয় স্বজনের পক্ষ থেকে সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামীলীগে পক্ষে কাজ করলে ৭ তারিখের পরে লংগদুতে থাকতে দেয়া হবে না। উপজেলায় আমাদের চাইতে বড় কেউ নেই। আমরা সকল উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবো। কেউ কিছু দিতে পারবে না। তাই আমাদের পছন্দের প্রার্থী যদি জয় লাভ না করে তাহলে কোন উন্নয়ন লংগদুতে হবে না বলে হুমকী প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও দাবী করেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।
লংগদু সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ প্রার্থী রতন কুমার চাকমা বলেন, সদর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এই সিট পায়নি। দলীয় নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকায় আমরা এই সিটটি এবার পাওয়ার আশা করছি। কিন্তু দলীয় কিছু বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আমাদের এই সিটটি আবারো হারাতে হবে। তাই যারা বিরোধীতা করছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আলী বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার সরাসরি আওয়ামীলীগের বিরোধীতা করছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে তার ছেলের পক্ষে কাজ করার জন্য বলছে। যদি তার ছেলের পক্ষে কাজ না করে তাহলে ৭ তারিখের পরে মামলা হামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়ে কিভাবে শেখ হাসিনা ও দীপংকরের নৌকা ফুটো করে দিবে বলে ঘোষনা দেয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক ছেলে এরশাদ সরকার বলেন, আমি আওয়ামীলীগের নৌকার বিরুদ্ধে নয়। আমি নৌকার প্রার্থী জামায়াত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীর বিরুদ্ধে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো নানা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন আমি ১ হাজার জনগন নিয়ে নৌকার প্রতীক পাওয়ার জন্য জেলা কমিটির কাছে অবেদন করেছি কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের উর্দ্ধতন নেতারা টাকা কেয়ে বিএনপি জামায়াতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তাই আওয়ামীলীগকে সিটটি উপহার দিতে নির্বাচন করছি।
গুলশাখালী আওয়ামীলীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে যদি আওয়ামীলীরে বিরোধীতা করে তাহলে তা মেনে নেয়া যায় না। তারা পরিষদের সদস্য হবে দলীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু শেখ হাসিনার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নৌকার তলা কানা করে দিবে বলে ঘোষনা দিবে তা কীভাবে মেনে নিবে জনগন। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিম লংগদুতে উপজেলা আওয়ামীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তিনি তার ভাতিজা নির্বাচিত না হলে গুলশাখালীতে কোন উন্নয়ন করতে দিবে না বলেও হুমকী প্রদর্শন করেন। তার ভাতিজাকে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি দীপংকর তালুকদারকে ও বিভিন্ন ভাবে গালমন্দ করছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা কমিটির প্রতি আহবান জানান।
আওয়ামীলীগে বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিমের ভাতিজা আব্দুল মালেক বলেন, দল যাকে মনে করেছে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাতে আমাদের কোন সমস্যা নেই। দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে ভালেবাবে বলেই তাদের চাপে আমি নির্বাচন করছি। এখানে আমার চাচা কোন মুখ্য নয়। আমার জনপ্রিয়তার কারনেই আমি নির্বাচন করছি। আমি জয় লাভ করে দীপংকর তালুকদারের হাতে সিটটি উপহার দিবো।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, আমরা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও দীপংকর তালুকাদরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছি। দলীয় প্রতীক নৌকা এই নৌকাকে জয় লাভ করার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা করবো। তিনি বরেন, দলীয় পদে থেকে দলের বিরোধীতা করা মানে রাজাকার ও আলবদদের সহযোগিতা করা সমান। তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যে যাবে তাকে দল থেকে অবশ্যই বহিস্কার করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে তারা যে কাজ গুলো করছে তা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। দললের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান, ও জেলা পরিষদ সদস্য এখন সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা তাদের ছেলে ও ভাতিজাকে নির্বাচিত করতে নৌকার ডুবিয়ে দেবে এই ঘোষণায় আমরা মর্মাহত। আমরা এর জন্য কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির কঠোর সিদ্ধান্ত আশা করছি।
রাঙ্গামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান বলেন, দলের ভিতরে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে দলের প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে আমরা হাতাশায় ভুগছি। তিনি বলেন, দলীয় অবস্থানে আমরা আশাবাদী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিস্কার করা হলে আশা করছি আমরা ৭ টি সিটই আওয়ামীলীগের পাবো। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর জানান, রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় যে অন্ত কোন্দল আমরা সকলেই মিঠিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। সোমবার জেলা কমিটির বৈঠক আছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যারা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তাদের বহিস্কার করা হবে। দলের সাথে যারা বিদ্রোহ করছে তাদের বিরুদ্ধেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।