লামায় ১৩ প্রকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ব্যয় ১২কোটি ১৮লাখ টাকার

বান্দরবান

সেচ ড্রেইন নির্মানে ১হাজার ৩শত একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে, সূচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥

বান্দরবানের লামা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও লামা পৌরসভায় মোট ১৭হাজার ৯শত মিটার সেচ ড্রেন নির্মান কাজ চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১৩টি সেচ ড্রেইন নির্মান ও পাম্প মেশিন স্থাপন প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ১২কোটি ১৮লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসের নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হলে উপজেলার ১৩শত একর জমিতে চাষাবাদ করতে স্থানীয় চাষীরা।

উপজেলার যে সব স্থানে ১৩টি সেচ ড্রেন নির্মান ও পাম্প মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে ঃ লামা সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নেওয়াজ বাড়ী মন্টু বসাকের ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে নিচের জমিতে ৭০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার মিটার সেচ ড্রেইন নির্মান ও পাম্প মেশিন স্থাপন, গজালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাইশপাড়ি এলাকায় ৭০লাখ টাকা ব্যয়ে চাষাবাদের জন্য ১হাজার মিটার সেচ ড্রেইন, সেচ পাম্প ও ড্যাম নির্মান, সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা মগেশ্বরী মন্দিরের সামনে হতে মুসলিম পাড়া পর্যন্ত ৯৮লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ১হাজার ৫শত মিটার সেচ ড্রেইন ও পাম্প মেশিন স্থাপন, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দরদরী বড়ুয়াপাড়া বিমলের বাড়ী হতে বিকাশ বড়ুয়ার বাড়ী পর্যন্ত ১কোটি ৩০লাখ টাকা ব্যয়ে ২হাজার মিটার সেচ ড্রেইন ও পাম্প মেশিন স্থাপন, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের শিলেরতুয়া নয়া মার্মা পাড়া হতে শিলের তুয়া বাজার পর্যন্ত ১কোটি ৩০লাখ টাকা ব্যয়ে ২হাজার মিটার সেচ ড্রেইন নির্মান ও পাম্প মেশিন স্থাপন, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মাষ্টারপাড়া আলীআক্কাসের বাড়ী হতে হাফেজপাড়া মসজিদ পর্যন্ত ১কোটি ৩০লাখ টাকা ব্যয়ে ২হাজার মিটার সেচ ড্রেইন নির্মান ও পাম্প মেশিন স্থাপন, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি হাজি নুরুল কবিরের বাড়ি হতে রাঙ্গাঝিরি ও বটগাছ তলা পর্যন্ত ৭০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার মিটার সেচ ড্রেন ও পাম্প স্থাপন, লামা পৌরসভার ৫ও৬নং ওয়ার্ডের সাবেক বিলছড়ি শাহজাহানের বাড়ি হতে আনিচ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ১কোটি ১০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার ৫শত মিটার সেচ ড্রেইন ও পাম্প মেশিন স্থাপন, লামা পৌরসভার ৫ও৬নং ওয়ার্ডের কলিঙ্গাবিল মাষ্টার খলিফার বাড়ি হতে লামা মুখ পর্যন্ত ৫০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার মিটার সেচ ড্রেইন নির্মান ও পাম্প স্থাপন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ছৈয়দ ও মুসলিমের জমি হতে আবুল কাশেমের জমি হয়ে তাজুল ইসলামের জমি পর্যন্ত ৯০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার ২শত মিটার সেচ ড্রেইন ও পাম্প স্থাপন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বনফুর জোড়া ব্রীজ হতে রাজা পাড়া পর্যন্ত ১কোটি ১০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার ৫শত মিটার সেচ ড্রেইন ও পাম্প স্থাপন।

এ গারোটি প্রকল্পের কাজ প্রায় ৬০শতাংশ থেকে ৭০শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ত্রিদীপ চাকমা। তিনি আরো জানান, বাকী দুইটি প্রকল্পের কাজ শিগ্রই শুরু হবে। প্রকল্প দুইটি হলো, ফাইতং হেডম্যান পাড়া হতে বড়মুসলিম পাড়া পর্যন্ত ৭০লাখ টাকা ব্যয়ে ১হাজার মিটার সেচ ডেইন ও পাম্প স্থাপন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঁশখাইল্যা ঝিরি মুসলিমপাড়া হতে ইয়াংছা বড় পাড়া পর্যন্ত ৯০লাখ টাকা ব্যয়ে ১২শত মিটার সেচ ড্রেন ও পাম্প স্থাপন নির্মান কাজ।

এ বিষয়ে পার্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্ ুবিন মোঃ ইয়াছির আরাফাত বলেন, বর্ষা মৌসুম ব্যতিত বাকি সময় গুলোতে শুধু পানির অভাবে প্রচুর জমি পতিত থাকে। এসব জমি চাষের আওতায় আনার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সেচ ড্রেন নির্মাণ কাজে গুরুত্বারোপ করে এ সব সেচ ড্রেন নির্মান করছে। এসব সেচ ড্রেন নির্মাণের ফলে কৃষি সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হবে। পাল্টে যাবে পার্বত্য কৃষি চিত্র। সূচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে এসব সেচ ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলীদের সার্বিক মনিটরিং এ সব কাজ চলছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেচ ড্রেন নির্মাণের ফলে পাহাড় অনাবাদি বিস্তৃত জমিগুলোতে বছরে তিন ফসলি ধান উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।

ইব্রাহীম লিড়ার পাড়ার স্কীম ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জানান, আমাদের এলাকায় প্রায় ১শত একর সমতল জমির মালিক প্রান্তিক কৃষক। জমিগুলো সেচের আওতায় আসায় এসব কৃষকদের দৈন্যতা দূর হবে। সেচ ড্রেনের কাজ শতভাগ হয়েছে। আমাদের দেখা মতো কাজের কোন দূর্ণীতি হয়নি।

উন্নয়ন বোর্ডের সাইট পরিদর্শক কৃষান দাশ জানান, তাদের নিবিড় তদারকির মাধ্যমে সেচ ড্রেইন নিমান কাজ চলছে।
সরজমিনে লামা পৌরসভার সভার কলিঙ্গাবিল এলাকার মোঃ হেলালসহ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারাও কাজের গুণগতমানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
পার্বত্য জনপদকে কৃষি সমৃদ্ধ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন, রূপসী পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চাচিংপ্রু মার্মা ও লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জনবান্ধব উন্নয়নে রেকর্ড করেছেন। এর জন্য কৃষকরা সুফল পাবে|

গত ১৮জানুয়ারী সেচ ড্রেইন নির্মান কাজ পরিদর্শনে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী। তিনি কাজ পরিদর্শনে এসে কাজের গুণগতমান পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেছেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সেচ সুবিধার ফলে পাহাড়ে আর বর্ষা নির্ভরতা থাকবে না। উপত্যকার সেচের আওয়ায় আনা জমিতে বছরে দুই থেকে তিন বার আউশ-আমন ধান চাষ করা যাবে। পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। প্রচুর উর্বর জমিও আছে। সেচের সুবিধার ফলে প্রচুর পরিমাণে সবজি, ধান, ভুট্টা, কলা, পেঁপে, লেবু, পেয়ারা, আনারসসহ বিভিন্ন ফল ফসল উৎপাদন করা যাবে। কিন্তু সেচ সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা য়ায়নি এতোদিন।