চেঙ্গী ব্রীজ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ

রাঙ্গামাটি

॥ শিপ্রা দেবী ॥

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেঙ্গী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নানিয়ারচর উপজেলাসহ রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বুধবার সকালে নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী সেতুর ভার্চুয়ালী উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৪টি উপজেলার কয়েকলক্ষ মানুষের সড়ক যোগাযোগের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর পরই চলাচলের জন্য সেতটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। চেঙ্গী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় নানিয়ারচরসহ পুরো জেলার সাথে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। সেতু পেয়ে খুশি সাধারন মানুষ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, কক্সবাজার সদর আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল, খাগড়াছড়ি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহম্মদ সাইফুর রহমান এসইউপি,এএফ ডব্লিউ সি, পিএসসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন, এনডিসি, পিএসসি, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন চট্টগ্রাম, বিএ-৩৪৮১ মেঃ জেঃ মোহাম্মদ ফখরুল আহসান, বিএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, জিওসি ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু কক্সবাজার, বিএ-৪৭৭৬ ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি, ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, বিএ- ৪৯০১ ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম এনডিসি, পিএসি ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনট্রাকশন ইষ্ট ব্রিগেড কমান্ডার চট্টগ্রাম, বিএ-৫৫০৯ কর্ণেল খন্দকার তারিকুল ইসলাম এফ ডাব্লিউ সি, পিএসসি, কর্ণেল জিএস, ডিজিএফআই রাঙ্গামাটি, ডেড কমান্ডার, বিএ-৫১৬৩ কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এস ইউপি, এ এফ ডাব্লিউ সি, পিএসসি, এডিজি ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ইষ্ট ব্রিগেড কমান্ডার চট্টগ্রাম, বিএ ৬৫০০ লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন দিদার পিএসসি, অধিনায়ক ২০ ইসিবি ডবলমুড়ি চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, নানিয়ারচর উপজেলার জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল এসএম রুবাইয়েত হোসেন, পিএসপি, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর মোহাম্মদ মোদদাছছের হোসেন, রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আরেফিন, নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি রহমান তিন্নিসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রীজ উদ্বোধন নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জানান, এই একটি ব্রীজ রাঙ্গামাটি জেলার ৪টি উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে এবং এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল জানান, ঘুমধূম সীমান্ত সড়ক বাস্তবায়িত হওয়ায় তা এশিয়া হাইওয়েজের মাধ্যমে সুদুর চীন দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

৩৪ ইঞ্জিয়ার কন্সট্রাকশন এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহম্মদ সাইফুর রহমান এসইউপি, এফ ডব্লিউ সি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং নানিয়রচর সেতুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের ৪টি উপজেলাসহ জেলার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে এবং পর্যটন ও ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে তা গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, চেঙ্গী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

নানিয়ারচরবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী চেঙ্গী সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। এই সেতুটির মাধ্যমে ৪টি উপজেলাসহ রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলাগুলোও উপকৃত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে এবং ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন এর বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট সময়েই সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হয়। রাঙ্গামাটি নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২০ কোটি টাকা।
সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান (ইসিবি) ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এই লেন সংখ্যা ২টি। যার মধ্যে ৭.৩ মিটার ক্যালেঞ্জওয়ে রয়েছে। এছাড়া ১০ স্প্যান ও ৯পিয়ার সম্বলিত এই সেতুটিতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে সেতুর ২টি এ্যাবাটমেন্ট রক্ষাপ্রদ কাজ, ২.২ কিলোমিটার এপ্রাচ সড়ক এবং সড়ক বিভাগের একটি ডাক বাংলালো। এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২৭.৬১ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন একটি সেতুর অভাবে নদী পথে যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হতো কয়েক লাখ মানুষকে। সেতুটি চালু হওয়ায় দীর্ঘদিনের যোগাযোগে ভোগান্তি কমলো। সেতু উন্মুক্ত হওয়ায় পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। তেমনী এ সেতুটি নির্মিত হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সাথে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, সাজেক এবং খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে উঠলো। পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।
#