নিয়োগ স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে– অংসুইপ্রু চৌধুরী
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চাকুরী পেতে টাকা লাগে এই কথাটি মিথ্যা করে দিয়ে মেধারভিত্তিতে চাকুরী হয়েছে বলে দাবী করেছেন নিয়োগ প্রার্থীরা। নিয়োগে পে-অর্ডার ও ফটোকপির টাকা ছাড়া আর কোন টা লাগেনি বলে দাবী করেন চাকুরী পাওয়া বেশ কয়েকজন। পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, টাকা ছাড়া চাকুরী হয় এই প্রমান করেছে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করেন।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা খুশী, তাদের দাবি টাকা ছাড়াই মেধার ভিত্তিতে তাদের চাকরি হয়েছে। চাকুরী পেতে দিতে হয়েছে পে অর্ডারের টাকা এবং ফটোকপির টাকা। সব মিলিয়ে ৪০০ টাকার মধ্যেই চাকুরী পেয়েছে বলে জানান প্রার্থীরা।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পুরানো, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান পরিষদের প্রথম নিয়োগ ছিলো পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের, এই অভিযোগ ভাঙ্গতে তারা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ দিয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়নে ১৯৮৯ সনে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয়, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরে ১৯৯৮ সনে তিনটি স্থানীয় সরকার পরিষদের আইন সংশোধন করে পার্বত্য জেলা পরিষদ নামে রাখা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনাসহ ৩০টি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়। এসব বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ ও বদলি জেলা পরিষদ করে থাকে। ইতিপুর্বে জেলা পরিষদগুলোতে হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষকসহ সব নিয়োগে কম বেশী দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর অনিয়মের অভিযোগ ছিলো। বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্ব নেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, এরমধ্যে কয়েকদিন আগে দেয়া পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নিয়োগটি ছিলো তাদের আমলে প্রথম নিয়োগ। বর্তমান পরিষদ অতীতের সব দুর্নাম ঘোচাতে চান, তাই এবার তারা স্বচ্ছতার সাথে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন বলে দাবী তাদের।
জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্তৃপক্ষ পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (পুরুষ), অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার, পরিবার কল্যাণ সহকারি (মহিলা), অফিস সহায়ক, আয়া (মহিলা), নিরাপত্তা প্রহরী, নৈশ প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী মোট ৯টি পদের বিপরীতে ১০৪জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় গত বছরের (২০২০) ১লা ডিসেম্বর। এতে বিভিন্ন পদে আবেদনপত্র জমা পড়ে ৯,১৬৮ জনের। ত্রুটিপুর্ণ আবেদন বাতিল করা হয় ১৬০১টি। ইন্টারভিউ কার্ড ছাড়া হয় ৭,৫৬৭ জনের নামে। ৫টি পদে (পরিবার পরিকল্পনা সহকারি, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (পুরুষ), অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার, পরিবার কল্যাণ সহকারি (মহিলা) ও অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৬,১৫৯জন। এরমধ্যে মধ্যে প্রতিটি পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ৩জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়, বাকি চারটি (আয়া (মহিলা), নিরাপত্তা প্রহরী, নৈশ প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কমী) পদে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪০৮জন। সব পরীক্ষা শেষে ২০ ডিসেম্বর রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা খুশী, তাদের দাবি টাকা ছাড়াই মেধার ভিত্তিতে তাদের চাকরি হয়েছে। চাকুরী পেতে দিতে হয়েছে পে অর্ডারের টাকা এবং ফটোকপির টাকা। সব মিলিয়ে ৪০০ টাকার মধ্যেই চাকুরী পেয়েছে বলে জানান প্রার্থীরা।
প্রতিবন্ধী কোটায় চাকুরি পাওয়া রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা এলাকায় বসবাস করা নমনিতা দেওয়ান বলেন, জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী না হলেও ২০০৮ সনে মোবাইল বিস্পোরণে তার হাতের কব্জি, গলার এক পাশ ও মাথা ঝলসে যায়, বিভিন্ন সময় চাকুরির জন্য দৌড়ালেও চাকুরি পাননি। অনেক আবেদন অনেক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু চাকুরী হয়নি। অনেক অফিসে মেধার ভিত্তিতে তালিকায় ছিলাম কিন্তু চাকুরী নামক সোনার হরিণ হাতে পায়নি টাকা ছিলো না প্রয়োজনীয় টাকা দিতে পারিনি তাই এগিয়ে যেতে পারিনি। এবারের জেলা পরিষদের নিয়োগে আমার মাত্র ৩৫৭ টাকা খরচ হয়েছে চাকুরীর জন্য। এবার পরিবারের কাছে আমি আর বোঝা নই।
পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে উত্তীর্ণ রাসেলী চাকমা বলেন, সমাজে একটি ট্রেন্ড চলে আসে। চাকুরী পেতে গেলে গুনতে হয় বড় অংকের টাকা। জেলা পরিষদে চাকুরি নিতে গেলে টাকা দিতে হয়, আমি ভয়েও ছিলাম টাকা পাবো কই। তারপরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু রেজাল্টে আমার নাম আসার পর বুঝতে পারলাম, টাকা ছাড়াও চাকুরি হয়, জেলা পরিষদ যোগ্যতা ও মেধার মুল্যায়ন করে। আমি পে অর্ডার ও ফটোকপি এবং গাড়ী ভাড়া ছাড়া আর কোন টাকা আমাকে গুনতে হয়নি। তিনি বর্তমান পরিষদকে ধন্যবাদ জানান।
পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে উত্তীর্ণ হওয়া নাজনিন ইসলাম জানান, মেধার ভিত্তিতে এবার জেলা পরিষদ নিয়োগ দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়, এতেও তিনি পাস করেন এরপর ফাইনাল ফলাফলে তার নামে আসে। তিনি আরো বলেন, নিয়োগে উত্তীর্ণ হতে তার কোন টাকা দিতে হয়নি ।
অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া অভিলাস ত্রিপুরা জানান, জেলা পরিষদের এবার নিয়োগ স্বচ্ছ হয়েছে তার কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা দাবি করা হয়নি। যোগ্যতা যাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তার মতে জেলা পরিষদ যদি এই মেধা যাচাইয়ের অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের যে দুর্নাম রয়েছে সেটি ঘুচাবে।
রাঙ্গামাটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক ও পরীক্ষার সদস্য সচিব আনোয়ারুল আজিম জানান, নিয়োগ কমিটির প্রত্যোক সদস্যর আন্তরিকতা এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় আমরা পরীক্ষা শতভাগ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করেছি।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুপ্রু চৌধুরী জানান, বর্তমান পরিষদ শেখ হাসিনা ও দীপংকর তালুকদারের মনোনীত পরিষদ। তাই আমরা পার্বত্য অঞ্চলের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি মেধাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, আমরা মেধাকে মুল্যায়নের চেষ্টা করেছি এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ দিয়েছি, আগামীতে এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।
পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর প্রত্যোকটি নিয়োগ যেন স্বচ্ছ জবাবদিহী ও দুর্নীতিমুক্ত হয় এমনটা প্রত্যাশা পাহাড়ের মানুষের।