এ কে এম মকছুদ আহমেদের জীবনী “পাহাড়ের সংশপ্তক” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও বান্দরবান প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্যদের সনদ বিতরণ অনুষ্টান

বান্দরবান

৫২ বছর আগে অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্বত্য চট্টগ্রামের আলোর প্রদীপ নিয়ে যে ফেরীওয়ালা কাজ করেছে তার ঋণ শোধ করা যাবে না….পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥

পাহাড়র সংশপ্তক এ,কে,এম মকছুদ পাহাড়ের দুর্গম পথকে মশ্রিন করে দিয়েছে নতুনদেরকে সেই পথে নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি। তিনি বলেন, ৫২ বছর আগে অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্বত্য চট্টগ্রামের আলোর প্রদীপ নিয়ে যে ফেরী ওয়ালা কাজ করেছেন তার ঋণ আমরা কখনোই পরিশোধ করতে পারবো না। পাহাড়ের প্রতিটি দুর্গম পাড়ায় তার কলমের কালি ছড়িয়েছেন। সেই কালির দাগ দেখে আমাদের মতো সমাজ সেবকরা উন্নয়নের হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। তিনি পাহাড়ের মানুষের কথা চিন্তা করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কেও এগিয়ে আসার আহবান জানান।

১২ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় বান্দরবান প্রেস ক্লাবের আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ কে এম মকছুদ আহমেদের জীবনী ” পাহাড়ের সংশপ্তক ” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও বান্দরবান প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্যদের সনদ বিতরণ অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্বত্য মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনুর সভাপতিত্বে এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, সিভিল সার্জন ডা.অংসুই প্রু মারমা, রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ কে এম মকছুদ আহমেদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া মাস্টার, সাবেক সহ সভাপতি এম এ হাকিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক, সদস্য আবুল বশর সিদ্দিকী, মুছা ফারুকী, মিলন চক্রবর্তীসহ বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বীর বাহাদুর বলেন, সাংবাদিকের একটি কলম একজন মানুষকে যেমন দেউলিয়া করতে পারে তেমনি একটি কলম মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তাই এই কলমকে আমরা সব সময় সঠিক কাজে ব্যবহার করবো। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি পাহাড় ও মহল্লায় এই গুনী মানুষের পদ চারণায় আলোকিত হয়েছে। তার কলমের কালিতে পাহাড়ের প্রতিটি মানুষের অভাব অভিযোগের কথা সব সময় উঠে এসেছিলো। পার্বত্য মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি তিল তিল করে তার সম্পাদিত পত্রিকা বনভূমি ও দৈনিক গিরিদর্পণ প্রতিটি দিন মানুষের চোখের সামনে মেলে ধরতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নতুন প্রজন্মকে তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

বীর বাহাদুর বলেন, এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ তার কলমের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। তার লেখনীতে পাহাড়ের শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। তার লেখনী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মাধ্যমে পার্বত্য শান্তি চুক্তির বীজ বপন হয়েছিল। তারা বীজ বপন করেছিলো বলেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের ২ যুগের বেশী সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সফর হয়েছে। এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তার লেখনী ছিলো আমাদের অনুপ্রেরণা ও কাজের গতি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, গুনীজনকে সম্মান দিলে সম্মান বাড়ে সকলের। এসময় তিনি আরো বলেন, যারা মরনপণ সংগ্রাম করে, যুদ্ধ যেনে ও যুদ্ধস্থান ত্যাগ করেনা তিনি হলেন সংশপ্তক। আর এই পাহাড়ের সংশপ্তক হলেন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ কে এম মকছুদ আহমেদ।

এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, সাংবাদিকদের স্বচ্ছ সংবাদ প্রকাশ করতে হবে আর কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে হবে। এসময় তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অসংখ্য টিভি চ্যানেল আর পত্রিকার প্রচার শুরু হয়েছে আর এতে নতুন নতুন অনেক সাংবাদিকের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এসময় তিনি বলেন, বান্দরবানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অবদান অপরিসীম।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.লুৎফুর রহমান গুনী মানুষের সম্মান জানাতে পারাটাই হচ্ছে সব চেয়ে গর্বের বিষয়। আমি যদি গুনী জনকে সম্মান করি তাহলে আমার গুণের কদর আগামী প্রজন্ম করবে। তাই এমন একজন মানুষ পাহাড়ের সংশপ্তক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদকে তার গুণের সম্মান জানাতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের অতন্দ্র প্রহরী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে যদি সংবাদ কর্মীরা না থাকতো তাহলে এই দুর্গম অঞ্চল গুলোতে কাজ করার খুবই কষ্ট সাধ্য হতো। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিক দুই জনই একে অপরের পরিপুরক। তেমনি পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘ ধরে সংবাদপত্র জগতে এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের অবদান আমরা সব সময় স্মরণে রাখবো।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সংবাদপত্রই পাহাড়ের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় ভ’মিকা রেখেছে। পার্বত্য অঞ্চলের সংবাদপত্রের পুরধা এ,কে,এম মকছুদ আহদের হাত ধরে পাহাড়ের পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বান্দরবান আরো বিলাশ বহুল বাস সার্ভিস দেয়ার জন্য পার্বত্য মন্ত্রীর কাছে দাবী জানান।
সিভিল সার্জন ডা.অংসুই প্রু মারমা বলেন, একটি সময় পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকার খবর গুলো আমরা দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার মাধ্যমেই পেয়ে থাকতাম। পত্রিকার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের টিম নিয়ে দুর্গম এলাকায় যেতে চেষ্টা করে সেবা দিয়েছি। এই গুনী মানুষের বইয়ের মোড় উন্মোচনে থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।

দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ৫২ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত এসেছে আমার জীবনে। পাহাড়ের প্রতিটি আনাচে কানাকে দুঃখী মানুষের সংবাদ তৈরী করতে গিয়ে অনেকের রক্ত চক্ষু দেখতে হয়েছে। তার পরও আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করা থেকে বিরত থাকিনী। মানুষের অভাব অভিযোগ গুলো বিবিসি, রয়টার, জাতীয় পত্রিকা এবং সর্বোপরী আমার সম্পাদিত পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছে এই শান্তি চুক্তির পেছনে আমার অবদান ছিলো পর্দার পেছনে। দৈনিক গিরিদর্পণ সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের সংবাদ পরিবেশন করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথকে সহজ করে দিয়েছি। আমার লেখনীর মাধ্যমেই পাহাড়ের প্রতিটি মানুষের হাসি কান্না ও তাদের আর্তনাদ ছিলো। এই কথা গুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছে। তারই ফলশ্রুতিতে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পথ সুগম হয়েছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, বর্তমান পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর ছিলো এই চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রদুত। তিনি আজ তার জীবনী নিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন পার্বত্য মন্ত্রীর হাত দিয়ে হওয়ায় বান্দরবান প্রেসক্লাব ও পার্বত্য মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র মো.আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যখন আকাশে বারুদের গন্ধ, পাহাড়ী ছড়া ও কর্ণফ’লী হৃদ দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ছে সেই সময়ে পাহাড়ের এই সংশপ্তক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ পায়ে হেটে হেটে মানুষের অভাব অভিযোগ গুলো তুলে এনেছে। তার সময়ে সাংবাদিকতা যে কঠিন ছিলো তা তখনকার মানুষ আর উনিই বলতে পারে। আজ নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা অনেক আনন্দের সাথে সাংবাদিকতা করতে পারছে। তারা ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছে। তিনি পাহাড়ের এই সংশপ্তকের দীর্ঘায়ুও সুস্থ জীবন কামনা করেন।

বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু তার বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ের এই সংশপ্তক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকা বের না করলে পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতা যে ব্যাপকতা তা কখনোই হতো না। এই মানুষটির হাত ধরেই আজ পাহাড়ের অনেক সাংবাদিক তাদের নিজেদের রুটি রুজি তৈরী করেছে। তার হাতের ছোয়া না থাকলে পাহাড়ের মানুষ গুলোর অভাব অভিযোগ গুলো তুলে ধরা কষ্ট সাধ্য হতো। তার জীবনী নিয়ে পাহাড়ের সংশপ্তক বইটির মোড়ক উন্মোচন আমাদের মাধ্যমে করতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি। আর যারা এই বইয়ে মোড়ক উন্মোচনে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্টানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ কে এম মকছুদ আহমেদের জীবনী ” পাহাড়ের সংশপ্তক ” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও বান্দরবান প্রেসক্লাবের স্থায়ী ১৩ জন সদস্যকে সনদ বিতরণ করেন পার্বত্য মন্ত্রী।