নির্বাচনী সহিংসতায় কাপ্তাইয়ের ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান নিহত, আহত-৩, আটক-৪

বিবিধ

॥ কাপ্তাই প্রতিনিধি ॥

রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় দুই গ্রুপে সংঘর্ষে কাপ্তাই ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান (৪০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরোও ৩ জন। এর মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১১টায় নতুন বাজারের মা বেকারির সামনে কাপ্তাই ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানান।

নিহত সজিবুর রহমান কাপ্তাই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং রাঙ্গামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। তিনি টানা দুইবার ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই ঘটনায় আহতরা হলেন- মো. আলাউদ্দিন (৪৫), মো. সালাউদ্দিন (৫৫) ও আব্দুল জলিল। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত আবদুল জলিলকে রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান, কাপ্তাই স্বাস্থ্য বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ওমর ফারুক রনি। তিনি জানান, নিহত সজিবের মাথায় একটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের ফলে হাসপাতালে আনার আগে তাঁর মৃত্যু হয়। আহত বাকি ২ জন উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাপ্তাই থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, কাপ্তাই নতুন বাজার মোশারফরের মালিকানাধীন মা বেকারিতে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদলের সমর্থকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সজিবের। সেই সময় বাদল গ্রুপের লোকজন ঢাকাইয়া কলোনি হতে লাঠি, লোহাসহ অর্তকিত হামলা করলে সজিবের মাথায় আঘাত করিলে সেই গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সজিবুর রহমান এর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে তাঁর সর্মথিত কর্মীরা উপজেলা সদর হাসপাতালের বাহিরে বিক্ষোভ করেন। এসময় কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দীন এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এরপর রাতে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান, কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব, কাপ্তাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঈনুল হোসেন চৌধুরী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। এসময় কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তাঁরা অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান।

হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকালে নতুন বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেছে নিহত সজিবুর রহমানের কর্মী সমর্থকরা। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন তারা।

এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সজিব মেম্বারের সঙ্গে কারো বাকবিতন্ডা হয়নি। তিনি মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে আক্তার নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আলাপ করছিলেন। ওই মুহূর্তে তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সজিবের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল বলেন, সজিবসহ ২০ জনের একটি গ্রুপ রাতে মা বেকারিতে এসে আমার সমর্থিত কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। পরে একসময় তাদের দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। মূলত সজিবরা গায়ে পড়েই তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে।

এদিকে সুইডিশ কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মো. আরিফুল ইসলাম বাবু (২৫) নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। সে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়া মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদলের সমর্থক বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া এই ঘটনায় আরোও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ দুপুর দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা দায়ের করেন নাই বলে ওসি জানান। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেথোয়াই মারমা নিহত হন। এ নিয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় কাপ্তাই উপজেলায় ২ জন নিহত হয়েছেন।