চার মাস পর খুলেছে পর্যটন স্পট, তবে আশানুরুপ পর্যটক নেই

রাঙ্গামাটি

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে স্বস্থি দেখা দিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টষ্ট ব্যবসায়ীদের। তবে আশানুরুপ পর্যটক ছিলো না প্রথম দিনে। এদিকে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রয়েছে কঠোর নির্দেশ। তবে দীর্ঘদিন করোনার কারণেবন্ধ থাকায় রাঙ্গামাটির প্রকৃতি সেজেছে অন্য রূপে। যানবাহনের কালো ধোয়া ও প্রকৃতির উপর কারো হাত না পড়ায় পাহাড়ের প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ বেড় করে দিয়েছে। এবারের রাঙ্গামাটির প্রকৃতি দেখতে পর্যটকরা আরো বেশী আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকায় রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে যেমন ধ্বস নেমেছে তেমনি লোকসান গুনতে হয়েছে ৩০ কোটি টাকার বেশি।
প্রথম দিন আসা কয়েকজন পর্যটক জানান করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধী অবস্থায় ছিলাম সরকার করোনার কারনে দেয়া লকডাউন তুলে নেয়ায় মানুষ স্বস্তিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা করতে পারছে। তারা বলেন সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে তাই বলে আমরা যেন তেন ভাবে চলাচল করবো তা হবে না। আমরা যদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে ঘুরাঘুরি করি তাহলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং করোনা দুর হয়ে যাবে।
এদিকে করোনাকালীন দীর্ঘদিন লকডাউনে পর্যটন কেন্দ্রিক রাঙ্গামাটির পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো বন্ধ থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা। শুধু তাই নয়, আর্থিক সংকটে পড়ে কষ্টে দিন যাপন করছিলো এইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। গত চার মাসে রাঙ্গামাটিতে হোটেল-মোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ৩০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। আজ থেকে সীমিত পরিসরে খোলে দেওয়া হয়েছে এই সমস্ত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো। যেখানে লোক সমাগম করা যাবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক। তবে সীমিত হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এই সমস্ত পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো খুলে দেওয়ায় মানুষের স্বস্তি ফিরেছে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন ঘাটের ট্যুরিস্ট বোর্ড ইজারাদার মো. রমজান আলী বলেন, গত বছর থেকে বোর্ড মালিক ও চালকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পর্যটন ঘাটে প্রায় শতাধিক বোর্ড রয়েছে। পর্যটক কেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোকসান হয়েছে ব্যবসায়ীদের। রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি কয়েকবার তাদের খাদ্য সহায়তায় প্রদান করেছেন। তারা বলেন দেশ করোনা মুক্ত থাকুক যাতে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ না হয়।
রাঙ্গামাটির হোটেল গুলোও দীর্ঘদিন পর খোলার প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে। অনেক হোটেলে পর্যটক আসলেও অনেক হোটেলে কোন পর্যটক নেই। আবার অনেক হোটেলে আগাম বুকিং এর কথা জানালেন হোটেল মালিক ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে পর্যটকদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে রাঙ্গামাটির মোটেল গুলো।
রাঙ্গামাটি হলিডে কমপ্লেক্সের বানিজ্যিক কর্মকর্তা মোঃ সোয়েব জানান দীর্ঘদিন পর রাঙ্গামাটি পর্যটন হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো খোলে দেওয়া হলেও এখানে পর্যটকদের সুযোগ থাকবে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক । স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পর্যটন করছি। টুরিস্ট পুলিশকে সর্বাত্মক নজরদারীতে রাখা হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে পর্যটনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্রিক রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গুলো খোলে দেওয়ার ফলে করোনাকালে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির লাগাম ধরা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের ঝুলন্ত সেতুকে ঘিরেই। তাই পর্যটকেরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে প্রায় দুই লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে। এছাড়া শহরের পুলিশের ‘পলওয়েলপার্ক’, ডিসির ‘রাঙ্গামাটি পার্ক’ সেনাবাহিনীর ‘আরণ্যক’, সুভলং ঝর্ণা, সুখীনীলগঞ্জ ও রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমান বেড়াতে আসা পর্যটকরা। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে আকর্ষণীয় ‘সাজেক ভ্যালি’ পর্যটকদের বেশী সমাগম হয়।