॥ কাপ্তাই প্রতিনিধি ॥
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী সনজিত কুমার তনচংগ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে তাঁর দায়িত্ব পড়ে ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের আওতাধীন দূর্গম হরিনছড়া, ভাইয্যাতলী এবং বারুদগৌলা মৌজায়। কাপ্তাই ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকা এটি। ৩ হাজার পাহাড়ী সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে, নেই কোন বাঙালী পরিবার।
কাপ্তাইয়ের জেটিঘাট হতে নৌপথে এর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিঃমি। এই পথ পাড়ি দিয়ে বিরামহীন ভাবে ইপিআই ও টিটি টিকা সেবা দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য সহকারী সনজিত কুমার তনচংগ্যা। কি রোদ, বৃষ্টি কিংবা মহা দূর্যোগেও থেমে নেই তাঁর এই কার্যক্রম। এইসব এলাকায় এক পাহাড় হতে আর পাহাড়ের চুড়ায় উঠে খেয়ে না খেয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তিনি সরকারের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে প্রান্তিক জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) কাপ্তাই জেটিঘাট এলাকায় কথা হয় সনজিতের সাথে। তিনি জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা দুর্যোগ যা হউক না কেন আমাদের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে না। নিয়ম অনুযায়ী এইসব দূর্গম এলাকায় গিয়ে টিকা দিতে হয়। দুর্গম এই এলাকাটির কাপ্তাই জেটিঘাট হতে দূরত্ব প্রায় ৪০কিঃ মিঃ ও বেশি। আর একমাত্র বাহন একমাত্র ইঞ্জিন চালিত নৌকা, কোন সড়ক যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এক কথায় বলা যায় একেবারে বিচ্ছিন্ন এলাকা। ইপিআই শিশু টিকা, টিটি টিকাসহ অন্যান্য সেবা দিতে সঠিক সময়ে ইঞ্চিন বোট না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় টিকা সেবা দিতে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে বা আসতে নিজ খরচে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয় বলে জানান এই স্বাস্থ্যকর্মী।
তিনি জানান, কাপ্তাই ইউপি এলাকার ১,২,ও ৩নং ওয়ার্ডের দুর্গম পাড়াগুলো মধ্যে রয়েছে ভাইবোনছড়া, হরিণছড়া (হেডম্যান পাড়া), মোহনলাল পাড়া, লক্ষীধন কার্বারী পাড়া, নোয়াপাড়া, গুড়াছড়া মূখ পাড়া, তাইতংপাড়া, ভাঙ্গামুড়া বড়পাড়া, বেচারাম পাড়া, পাংখোয়া পাড়া, নোয়ামনি মেম্বার পাড়া, বেথাল পাংখোয়াপাড়া, অংগইয়্যা পাড়া, গাছকাটা ছড়া (কুদুকছড়ি), হেডম্যানপাড়া, কিলাছড়ি ভাবনা কেন্দ্র পাড়া, গোলক ধনপাড়া, হাতিমারা শুভধন পাড়া, নারশ্য পাড়া ও বারুদগৌলা মৌনপাড়া। প্রতিটি পাড়ার দুরত্ব অনেক দূর, পায়ে হেটে এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড় আবার নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় গিয়ে সেবা দিতে অনেক সময় লেগে যায়।
তিনি বলেন, এই কঠোর লকডাউন আমরা ইপিআই ও টিটি টিকা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। বিভিন্ন দুর্গমতা ভেদ করে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়েছি এবং টিকা কার্যক্রম চালিয়েছি। কাজ শেষ হলে আসতে না পাড়ায় কোন সময় না খেয়ে বা বাসা হতে নিয়ে যাওয়া শুকনা খাবার খেয়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে রাত যাপন করেছি।
এলাকার ইউপি সদস্য নবীন মেম্বার, সুইপ্রু মারমা ও এলাকাবাসী বরণা তনচংগ্যা, সাচিংমা মারমা ও বিশন তনচংগ্যা বলেন, উক্ত স্বাস্থ্য সহকারী আমাদের প্রতিটি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরলস ভাবে টিকাসহ সকল স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ আমাদের দিচ্ছেন। তাঁর সেবার মান খুব উন্নত।
কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ওমর ফারুক রনি জানান, প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা, মেসেজ গুলো পৌঁছাতে স্বাস্থ্য সহকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি আরোও জানান, সনজিতসহ আরোও ২৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করে আসছেন।
#
