৭ বছরেও শেষ হয়নি প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ

খাগড়াছড়ি

॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
দীর্ঘ সাত বছর পার হলেও এখনো শেষ করতে পারেনি প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ। এরি মধ্যে আবাসন সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই অনাথ শিশুদের। সীমাহীন কষ্টে কাটছে তাদের রাত, তবে খবর রাখে না কেউ। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এক তলা ছাদ করার পর উপরে ছাঁদ আর চারপাশে পিলারের স্তম্ভ, ব্যাস এটুকুতেই থমকে আছে দ্বিতল এই ভবনটি। ইতোমধ্যে ছাঁদের বিভিন্ন অংশে ফাটলও ধরেছে, ছাঁদ বেয়ে চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির জল।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের বুলিপাড়ায় রয়েছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শাক্যমুণি বৌদ্ধ বিহার। এই বিহারের পাশেই ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদন। উদ্দেশ্য ছিলো পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনাথ শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি, নিজ নিজ মাতৃভাষায় এবং ধর্মীয় দেশনায় দীক্ষিত করবার। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯৪ জন অনাথ শিশু শিশু সদনটিতে বেড়ে উঠছে। আর শিশুদের ধর্মীয় দেশনা ও পাঠদানসহ যাবতীয় দেখভালের জন্য অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষসহ নিয়োজিত রয়েছেন ৯ জন ধর্মীয় গুরু।
কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিশু সদনটির আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে প্রথম ধাপে ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে ১০ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছিলো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কথা ছিলো পরবর্তীতে তৃতীয় ধাপের বরাদ্দের মাধ্যমে পুরোপুরি শেষ করা হবে ভবনটির নির্মাণ কাজ। তবে গত সাত বছরেও সেই বরাদ্দ আর হয়ে ওঠেনি।
শিশু সদনের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণী পড়–য়া সাথোং মারমা, দ্বিতীয় শ্রেণী পড়–য়া অংকজাই মারমা, চতুর্থ শ্রেণী পড়–য়া রাহুল ত্রিপুরা ও ৫ম শ্রেণী পড়–য়া থোয়াইচিংনু মারমা জানায়, বিহারের বারান্দায় কিংবা খাবার ঘরে গাদাগাদি করে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের।
শিশু সদনের সহকারী পরিচালক উপাধ্যক্ষ অগ্রসার ভিক্ষু বলেন, ‘আবাসিক ভবনটি সম্পন্ন করতে না পারায় শিশুদের রাত্রি যাপনে বেশ অসুবিধে হচ্ছে। যে ঘরে খায়, সে ঘরেই ঘুমোতে হয় তাদের। জায়গা সংকুলান না হওয়াতে অনেকে আবার বারান্দাতেই নিদ্রাপাতে। বর্ষা মৌসুমে তাদের কষ্ট বাড়ে।’
শিশুসদনের পরিচালনা কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুইচিংমং মারমা (ইন্দ্রবংশ) বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অনাথ শিশুরা এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বরাদ্দের জন্য প্রতি বছরই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়। তবে তাতে কোনো লাভ হয় না।’
শিশুসদনটির প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবংশ মহাথের বলেন, ‘২০০৭ সালে টিনের চালার বেড়ার ঘরে শুরু হয় শিশুসদনটির কার্যক্রম। সময়ের ব্যবধানে এটি এখন একটি আলোকিত ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে কেবলমাত্র আবাসনের অসুবিধার কারণে অনাথ শিশুরা এখানে থাকতে আগ্রহ হারাচ্ছে।’
এছাড়া শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণে এবং অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ধর্মীয় গুরু।
এদিকে ২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর কাছে আবেদন করা হয়। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী অর্থবছরে শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণের জন্য বরাদ্দ দেবেন। অথচ তাঁর মেয়াদে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি শিশুসদনটির জন্যে। এরই মধ্যে ২০২১ সালের শুরুর দিকে পরিষদের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, ‘শিশু সদনটিতে বরাদ্দ কবে দেয়া হয়েছিলো তা আমি অবগত নই। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর কেউ কোনো আবেদনও করেননি। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের সময় বিষয়টি বিবেচনা করবো।’
৭ বছরেও শেষ হয়নি প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
দীর্ঘ সাত বছর পার হলেও এখনো শেষ করতে পারেনি প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ। এরি মধ্যে আবাসন সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই অনাথ শিশুদের। সীমাহীন কষ্টে কাটছে তাদের রাত, তবে খবর রাখে না কেউ। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এক তলা ছাদ করার পর উপরে ছাঁদ আর চারপাশে পিলারের স্তম্ভ, ব্যাস এটুকুতেই থমকে আছে দ্বিতল এই ভবনটি। ইতোমধ্যে ছাঁদের বিভিন্ন অংশে ফাটলও ধরেছে, ছাঁদ বেয়ে চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির জল।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের বুলিপাড়ায় রয়েছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শাক্যমুণি বৌদ্ধ বিহার। এই বিহারের পাশেই ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো প্রজ্ঞাবংশ শিশু সদন। উদ্দেশ্য ছিলো পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনাথ শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি, নিজ নিজ মাতৃভাষায় এবং ধর্মীয় দেশনায় দীক্ষিত করবার। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯৪ জন অনাথ শিশু শিশু সদনটিতে বেড়ে উঠছে। আর শিশুদের ধর্মীয় দেশনা ও পাঠদানসহ যাবতীয় দেখভালের জন্য অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষসহ নিয়োজিত রয়েছেন ৯ জন ধর্মীয় গুরু।
কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিশু সদনটির আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে প্রথম ধাপে ৫ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে ১০ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছিলো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কথা ছিলো পরবর্তীতে তৃতীয় ধাপের বরাদ্দের মাধ্যমে পুরোপুরি শেষ করা হবে ভবনটির নির্মাণ কাজ। তবে গত সাত বছরেও সেই বরাদ্দ আর হয়ে ওঠেনি।
শিশু সদনের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণী পড়–য়া সাথোং মারমা, দ্বিতীয় শ্রেণী পড়–য়া অংকজাই মারমা, চতুর্থ শ্রেণী পড়–য়া রাহুল ত্রিপুরা ও ৫ম শ্রেণী পড়–য়া থোয়াইচিংনু মারমা জানায়, বিহারের বারান্দায় কিংবা খাবার ঘরে গাদাগাদি করে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের।
শিশু সদনের সহকারী পরিচালক উপাধ্যক্ষ অগ্রসার ভিক্ষু বলেন, ‘আবাসিক ভবনটি সম্পন্ন করতে না পারায় শিশুদের রাত্রি যাপনে বেশ অসুবিধে হচ্ছে। যে ঘরে খায়, সে ঘরেই ঘুমোতে হয় তাদের। জায়গা সংকুলান না হওয়াতে অনেকে আবার বারান্দাতেই নিদ্রাপাতে। বর্ষা মৌসুমে তাদের কষ্ট বাড়ে।’
শিশুসদনের পরিচালনা কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুইচিংমং মারমা (ইন্দ্রবংশ) বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অনাথ শিশুরা এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বরাদ্দের জন্য প্রতি বছরই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়। তবে তাতে কোনো লাভ হয় না।’
শিশুসদনটির প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবংশ মহাথের বলেন, ‘২০০৭ সালে টিনের চালার বেড়ার ঘরে শুরু হয় শিশুসদনটির কার্যক্রম। সময়ের ব্যবধানে এটি এখন একটি আলোকিত ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে কেবলমাত্র আবাসনের অসুবিধার কারণে অনাথ শিশুরা এখানে থাকতে আগ্রহ হারাচ্ছে।’
এছাড়া শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণে এবং অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ধর্মীয় গুরু।
এদিকে ২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর কাছে আবেদন করা হয়। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী অর্থবছরে শিশুসদনটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণের জন্য বরাদ্দ দেবেন। অথচ তাঁর মেয়াদে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি শিশুসদনটির জন্যে। এরই মধ্যে ২০২১ সালের শুরুর দিকে পরিষদের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, ‘শিশু সদনটিতে বরাদ্দ কবে দেয়া হয়েছিলো তা আমি অবগত নই। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর কেউ কোনো আবেদনও করেননি। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের সময় বিষয়টি বিবেচনা করবো।’