॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটিকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার হবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পৌরসভা হিসাবে অবস্থান হলেও দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে রাঙ্গামাটি পৌর শহর ও পৌর এলাকা। দ্বিতীয় মেয়াদে পৌরসভার দায়িত্ব নিয়ে রাঙ্গামাটি পৌরসভাকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাকে বাধা দিয়েছে। পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডকে ওয়াইফাই জোনের মাধ্যমে গড়ে তুলোর পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে আইটি সেক্টরে অভিজ্ঞ করে তোলার বিষয়ে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর পাহাড় ধ্বস সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কার্যক্রম সামাল দিতে আমাদের চলে গেছে। বর্তমান পাঁচ বছর হবে আমার জন্য চ্যালেঞ্জ এই চ্যালেঞ্জ মোবাবেলা করে রাঙ্গামাটি পৌরশহরকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে রাঙ্গামাটির পৌরবাসীর সকল নাগরিক সুুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করাই হবে আমার পৌর পরিষদের মুল কাজ বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও রাঙ্গামাটির সফল মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।
নিউজ রাঙ্গামাটির প্রতিবেদককে দেয়া এক স্বাক্ষাত কারে তিনি আরো বলেন, কাপ্তাই বাঁধ দেয়ার পর যে শহর গড়ে উঠেছে তা কোন পরিকল্পনা ছিলো না। একাটি অপরিকল্পিভাবে রাঙ্গামাটি পৌরশহর গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের বৃহত্তম পৌরশহর মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসভা একটি যার আয়তন ৬৫ বর্গ কিলোমিটারের পৌরসভা একটি। এ টি শুধু শহর নয় বিভিন্ন দ্বীপ বেষ্টিত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই পৌরসভা। লেক ও দ্বীপ ব্যাস্টিত হওয়ায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুবই কষ্ট সাধ্য। আমার পাঁচ বছরে কোন উন্নয়ন করা সম্ভব না। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ তিন বার সরকার গঠন করেছে বলেই আজ একটি উন্নয়নশীল দেশের পরিণত করতে পেরেছে। তেমনি একটি পৌরসভাকে আধুনিক হিসাবে গড়ে তুলতে হলে সময়ের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির উন্নয়ন করতে হলে সকল সেক্টরের সমন্বয় প্রয়োজন। সকল সেক্টরের সমন্বয় করা গেলে পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে বেশী সময় লাগবে না। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি পৌরসভার একটি প্ল্যান ছিলো যে প্লানের বাইরে কেউ কাজ করলে হবে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদের মনগড়া কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বলার পরও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পার্বত্য রাজনৈতিক সমস্যায় পর্যটন শিল্পে বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কাপ্তাই হ্রদ ব্যাষ্টিত এই পৌর শহরকে শুধু পৌরসভার রাস্তাঘাট দিয়ে হবে না। কাপ্তাই হ্রদের আশ পাশ ঘিরে অনেক পাহাড় রয়েছে এই পাহাড় গুলোতে যদি বিভিন্ন কটেজ, রেষ্টুরেন্ট সহ বিনোদন মুলক কিছু কার্যক্রম চালানো যায় তাহলে রাঙ্গামাটির পর্যটন থেকে দেশের অর্থনীতিতে বৃহৎ একটি রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এছাড়া এই পর্যটনকে ঘিরে পার্বত্য রাঙ্গামাটির বেকারত্ব যেমন দুর হবে তেমনি দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমনও বেশী বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের প্রাচীন জেলা হিসাবে যে কোন সময় সিটি কর্পোরেশন হতে পারে। তাই আমি শহরের ব্রজ্য ব্যবস্থাপনাও পরিকল্পনা ড্রাম্পিং গ্রহণ করেছি। এই ড্রাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে শহরের যত ময়লা আবর্জনা থাকবে তা সেখানে নিয়ে গিয়ে পচনশীল দ্রব্য, অপচনশীল দ্রব্য সহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা থেকে সার. প্লাষ্টিক সহ বিভিন্ন ব্রজ্য ব্যবস্থাপনা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন যদি ভবিষ্যতে সিটি কর্পোরেশন হয়ে যায় তাহলে এই শহরে ব্রজ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আর বেগ পেতে হবে না। সেই পরিকল্পনাতেই এডিবির অর্থায়নে পৌর এলাকার বাইরে ড্রাম্পার ষ্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও আঞ্চলিক কিছু সমস্যার কারণে তা করতে বিলম্বিত হয়ে যাচ্ছে। যদি এই প্রকল্প হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে আগামীতে এই প্রকল্প নিয়ে আসা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি বলেন বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক সমস্যার কারণে রাঙ্গামাটি জেলা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
যুব সমাজকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার করার যে পদক্ষেপ সে পদক্ষেপ আমার ছাত্র জীবন থেকেই চলে আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতীয়দের ট্যাডিশনাল বা ঐতিহ্য রয়েছে ভাতের রস থেকে মদ তৈরী করে তা বেশী ক্ষতি করে না। তাই মদ কখনোই বন্ধ করার সম্ভব নয়। একটি পার্বত্য অঞ্চলের বেশীরভাগ ঘরেই এই মদ তৈরী করে নিজেদের অতিথি আপ্পায়ন সহ বিভিন্ন সামাজিক উৎসবের জন্য। কিন্তু ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরেইন সহ আরো উচ্চ মূল্যের মাদক কখনোই রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় বেচা বিক্রি করতে দেয়া হবে না। আমাদের মেম্বারদের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি এলাকায় কমিটি গঠণ করে দিয়েছি যাতে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে তরুন ও যুব সমাজ থেকে মাদকে দুরে রাখতে। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে রাঙ্গামাটি সর্ব স্তরের প্রশাসনের ও রাঙ্গামাটি জনগনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
শিশুদের মানসিক বিকাশ ও বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটিতে একটি শিশু পার্ক রয়েছে যা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন। আগামীতে রাঙ্গামাটি মানিকছড়ি ও আসামবস্তী এলাকায় আরো দুটি শিশু পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা তার পরিষদের রয়েছে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, একটি শিশু পার্ক হওয়াতে এখানে অনেক চাপ হয়ে যায়। তাই আরো দুটি শিশু পার্ক যদি গড়ে তোলা যায় তাহলে শিশুরা তাদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন, রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র হিসাবে আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, এই শহরে আমাদের বেড়ে উঠা, এই শহরকে যদি অতীতে মেয়র গুলো পরিকল্পনা মাফিক সাজাতো তাহলে উন্নয়ন করতে বেগ পেতে হতো না। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কাটিয়ে উঠতে আমাদেরকে এখনো বড়ো বড়ো আরসিসি ধারক দেয়া নির্মাণ করতে হচ্ছে। যে রাস্তাঘাট গুলো ছিলো তা প্রকৃতিক দূর্যোগের ভেঙ্গে গেছে। গত পাঁচ বছরে আমরা এই প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করেছি। আগামী দিন গুলোতে একটি সবুজায়ন শহর করে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ণ করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিগত ৫ বছরের কার্যক্রম দেখে রাঙ্গামাটির জনগন আমাকের আবারো দায়িত্ব দিয়েছে। এই শহরের মানুষ গুলোকে আরো সেবা দিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে একটি ওয়াচ টাওয়ার, শহরের রাস্তাঘাট উন্নয়ন, আধুনিক পৌর ভবন তৈরী হচ্ছে যে পৌর ভবনের আইটি সেক্টর তৈরী করা হবে। শহরের ১১ টি স্থানে দৃষ্টি নন্দন যাত্রী ছাউনী করে ওয়াই ফাই জোন করা হবে। এছাড়া পর্যটন শহরের পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি সহ রাঙ্গামাটিকে একটি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলা হবে বলে তিনি জানান।
#